করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ডুবেছে ইসলামপুরের ব্যবসা

কাপড়ের পাইকারি বাজারের জন্য বিখ্যাত পুরান ঢাকার ইসলামপুর। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এখান থেকে শাড়ি, থ্রি পিসসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে যান। বছরজুড়েই ইসলামপুরে পাইকারি ব্যবসায়ীদের আনাগোনা থাকে। ঈদের মৌসুমে কেনাবেচা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তবে এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের কারণে দীর্ঘদিন যান চলাচল বন্ধ থাকায় আসতে পারেননি দূর-দূরান্তের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এর প্রভাব পড়েছে ইসলামপুরের ব্যবসায়।
শুক্রবার (৭ মে) ইসলামপুরের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তারা বলেন, ঈদকে সামনে রেখে দোকানে বেচাকেনা ভালো হবে এমন আশা ছিল। কিন্তু বিধিনিষেধের কারণে খুব খারাপ অবস্থা। পাইকারি বিক্রি নেই বললেই চলে। মাঝেমধ্যে দুই-একটা খুচরা বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগ মুহূর্তে যদি ব্যবসার এ অবস্থা হয় তাহলে দোকান বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

ইসলামপুরের পাইকারি বিক্রেতা ছোঁয়া ভার্শনের স্বত্বাধিকারী মোশারফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউনের কারণে আমরা শেষ হয়ে গেছি। এভাবে চলতে থাকলে পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। আগে ঈদকে সামনে রেখে দোকানের ৯০% পণ্য বিক্রি হয়ে যেত। এবার সব মিলে ১০% পণ্যও বিক্রি করতে পারিনি। কার কাছে বিক্রি করব? লোকজন ঢাকায় না আসতে পারলে কীভাবে বিক্রি করব? তাছাড়া গত বছর থেকে ঈদের সময় লকডাউন চলছে। এ জন্য অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।
তিনি বলেন, মাস শেষে একটা দোকানে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ আছে। কিন্তু বিক্রি তো নেই। কীভাবে এ খরচ সামাল দেবো? এ চাপ পরিবার-পরিজন কর্মচারীসহ সবার ওপর পড়ে।
খুচরা বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে দুই-একটা পণ্য খুচরা বিক্রি করছি। কিন্তু খুচরা বিক্রি করলেও তো সমস্যা আছে। কারণ যে কোনো পণ্যের (থ্রি পিস, শার্ট,প্যান্ট) চার থেকে ছয়টা সেট থাকে ভিন্ন ভিন্ন কালারের। একটা সেট ভেঙে দিলে পরবর্তীতে পাইকারি বিক্রেতারা সেটা নিতে চাইবে না। সব দিক দিয়েই বিপদে আছি।
আরও পড়ুন : ভরা মৌসুমে জুতার পাইকারদের মাথায় হাত
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ইসলামপুরের বিভিন্ন দোকানে মালিক কর্মচারীরা বসে আছেন। ক্রেতার দেখা নেই। মাঝেমধ্যে দুই-একজন খুচরা ক্রেতা এ দোকান ও দোকান ঘুরে কাপড় পছন্দ করছেন। ইসলামপুর পাইকারি মার্কেটের আয়ান সিটির কর্মচারী দেলোয়ার হোসেন সুমন বলেন, ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। দেশের এ পরিস্থিতিতে বেচাকেনা নেই বললেই চলে। কীভাবে বিক্রি করব? মানুষজন তো ঢাকায় আসতে পারে না। বাস চলাচল করলে বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঢাকায় আসতে পারতেন। তাতে আমাদেরও ব্যবসা ভালো হতো। ব্যবসায়ীরা ঢাকায় আসতে না পারায় আমাদের ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। গত দুই বছর ধরে টানা লোকসানের কারণে অনেক ব্যবসায়ী এরই মধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।

ইসলামপুর মার্কেটের ইউনিক ক্রাফট থ্রি পিসের ম্যানেজার ইকবাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুধুমাত্র ঢাকা সিটির খুচরা বিক্রেতারা কিছু পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন। অন্য জেলা থেকে খুচরা বিক্রেতারা কেউ ঢাকায় ঢুকতে না পারায় আমাদের ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। অন্য বছর এ সময় আমাদের পাইকারি বিক্রি শেষ হয়ে যেত। আর এবার আমরা শুরুই করতে পারলাম না। বর্তমান পরিস্থিতিতে খুচরা বিক্রিই আমাদের ভরসা।
তিনি আরও বলেন, গত দুই বছর ধরে টানা লোকসান দিয়ে অনেক ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ এ রকম ব্যবসা করে দোকান ভাড়া, কর্মচারী ও আনুষাঙ্গিক খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
অথচ দুই বছর আগেও ঈদের মৌসুমে ক্রেতার চাপে দম ফেলার ফুরসত পেতেন না ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন একেকটি দোকানে কয়েক লাখ টাকার বেচাকেনা হতো।
আরও পড়ুন : কোটি টাকার বই আমদানি করে বেকায়দায় ব্যবসায়ীরা
পাইকারি বেচাকেনায় ভাটা চলায় খুচরায় মনযোগ দিয়েছেন ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা। আশপাশের এলাকার সাধারণ ক্রেতারা এখন পাইকারি দোকান থেকে নিজেদের পছন্দমতো কাপড় কিনতে পারছেন। অথচ দুই বছর আগেও ইসলামপুরের এসব দোকানে খুচরা ক্রেতারা পাত্তা পেতেন না।
ইসলামপুরে কাপড় কিনতে আসা মেহেদী হাছান নামে একজন ক্রেতা বলেন, প্রতি বছর নিজের ও পরিবারের জন্য ইসলামপুর থেকেই কাপড় কিনি। অন্য বছর কাপড় কেনার আগেই বিক্রেতাদের কাছ থেকে খুচরা কেনাবেচার অনুমতি নিতে হতো। অনেক ব্যবসায়ী খুচরা শুনলে রাজি হতেন না। আর এখন ব্যবসায়ীরা নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করেন কিছু লাগবে কি না।
টিএইচ/এসকেডি/জেএস
