বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার না হলে রাস্তায় নামবেন ব্যবসায়ীরা

কম দামের বিস্কুট, কেকসহ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের বর্ধিত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক এবং গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) নেতারা। তারা বলছেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে শুল্ক-কর ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ভোক্তার স্বার্থবিরোধী। বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার না হলে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান বাপার নেতারা।
তারা বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ওপর করের বোঝা চাপানো হলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশের শ্রমজীবী, প্রান্তিক কৃষক ও নিম্ন আয়ের মানুষ। যে হারে ভ্যাট বাড়ানোর হয়েছে, তাতে বিস্কুট, কেক, জুসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। আর ভোক্তারা ক্রয়ক্ষমতা হারালে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বাপার সভাপতি এম এ হাশেম, সাধারণ সম্পাদক ইকতাদুল হক, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, এসিআই অ্যাগ্রি বিজনেস বিভাগের প্রেসিডেন্ট এফ এইচ আনসারি, স্কয়ার ফুডস অ্যান্ড বেভারেজের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা পারভেজ সাইফুল ইসলাম, আকিজ ফুডস অ্যান্ড বেভারেজের পরিচালক সৈয়দ জহিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া, এসএমসি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উদ্দিন নাসির, কিষোয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৯ জানুয়ারি শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করে। সেখানে মেশিনে উৎপাদন করা বিস্কুট, কেক, আচার, চাটনি, টমেটো পেস্ট, টমেটো কেচাপ, টমেটো সস, আম, আনারস, পেয়ারা, কলার পাল্প ইত্যাদি পণ্যের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ফলের রস ও ফ্রুট ড্রিংকসের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। পাশাপাশি ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। এনবিআরের শুল্ক ও কর বৃদ্ধির এই উদ্যোগে বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ রেস্তোরাঁ, তৈরি পোশাক, মিষ্টি, নন–এসি হোটেল, গ্যারেজে ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর।
দেশে উৎপাদিত ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বিস্কুটের দাম ৫, ১০ ও ১৫ টাকার মধ্যে। এসব বিস্কুট বড়লোক খায় না। অথচ কম দামের এসব পণ্যের ওপর ৩০০ শতাংশ ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে
আহসান খান চৌধুরী, চেয়ারম্যান, প্রাণ–আরএফএল গ্রুপ
সংবাদ সম্মেলনে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘খাবারের ওপর ভ্যাট বাড়াবেন না। তাতে মানুষের কষ্ট হবে।’ তিনি বলেন, দেশে উৎপাদিত ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বিস্কুটের দাম ৫, ১০ ও ১৫ টাকার মধ্যে। এসব বিস্কুট বড়লোক খায় না। অথচ কম দামের এসব পণ্যের ওপর ৩০০ শতাংশ ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। ভ্যাট না কমালে ছোট প্যাকেট থেকে দুটি বিস্কুট কমিয়ে দিতে বাধ্য হবেন উদ্যোক্তারা।
আহসান খান চৌধুরী আরও বলেন, ব্যাংকঋণের সুদের হার ৯-১১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৬ শতাংশ করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদহার বাড়ানোর কথা বলা হয়। মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টার মধ্যে ভ্যাটের বোঝা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘আগামী সাত দিন আমরা সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করব। তারপরও বিষয়টির সমাধান না হলে রাস্তায় নামব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ী; আমরা রাস্তায় নামতে চাই না। তবে ব্যবসা না থাকলে রাস্তায় নামতে বাধ্য হব। আমাদের রাস্তায় নামাবেন না।’
এসএমসি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উদ্দিন নাসির বলেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি থাকলে ভোগ কমতে থাকে। সেটি হলে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি দূরে থাক, টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়ে। পণ্যের দাম বাড়ালে বিক্রির পরিমাণ কমে যাবে। তাহলে সে ক্ষেত্রে সরকারের রাজস্ব বাড়বে কীভাবে?
মানুষের মেজাজ বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, অনর্থক ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে ব্যবসা ধ্বংস করবেন না। সাধারণ মানুষ, কৃষক, যুবসমাজ ও ব্যবসায়ীদের পালস বুঝে কাজ করুন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের অবদান ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এ খাতে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সহস্রাধিক। তবে বাপার সদস্য প্রায় ৪০০। এসব প্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাতের একটি।
সংবাদ সম্মেলনে বাপার সভাপতি এম এ হাশেম বলেন, ‘আমরা এমন একটি খাতে ব্যবসা করি, যার সঙ্গে শ্রমজীবী নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে প্রান্তিক কৃষকেরা সরাসরি জড়িত। শুল্ক–কর বাড়ানোর পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দামের ওপর বড় প্রভাব পড়বে না। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ সকালে চায়ের দোকানে এক কাপ চা, একটি বিস্কুট কিংবা কেক খেয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন। এখন যদি বিস্কুট ও কেকে ভ্যাটের পাশাপাশি গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়, তাহলে ৫ টাকায় একটি বিস্কুট কিংবা এক প্যাকেট বিস্কুট পাওয়া যাবে না। তাতে নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ সহজে ক্ষুধা নিবারণের সুযোগ হারাবেন।’
এআইএস