প্রশংসায় ভাসছেন আশিক চৌধুরী, নেটিজেনরা বলছেন ‘আসল নায়ক’

আশিক চৌধুরী। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তাকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর থেকেই একের পর এক বাজিমাত করছেন তিনি। ইতোমধ্যে কর্মদক্ষতা, উপস্থাপনা শৈলী, যোগ্যতা, বাচনভঙ্গি দিয়ে মানুষের মন জয় করেছেন। নেট দুনিয়া থেকে চায়ের আড্ডা, সাধারণ মানুষ থেকে উচ্চবিত্ত প্রায় সব শ্রেণির মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন। এককথায় সর্বত্রই তার প্রশংসার জোয়ার তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি আশিক চৌধুরীর কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে তিনি তথ্যবহুল ও সাবলীল ভাষায় দেশের সম্ভাবনাময়ী খাতগুলো তুলে ধরেছেন।
অনেকেই তার ভিডিওগুলো শেয়ার দিচ্ছেন। সেখানে ক্যাপশন ও কমেন্টে ব্যাপক প্রশংসা দেখা যায়। অনেককে আবার আফসোস করতেও দেখা যায় এ বলে যে— আশিক চৌধুরী এতদিন কোথায় ছিলেন? কী করতেন? কেন তাকে কাজে লাগানো যায়নি?

আরও পড়ুন
জানা গেছে, আশিক চৌধুরী পেশায় ব্যাংকার। সিঙ্গাপুরে বহুজাতিক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) রিয়েল অ্যাসেট ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার একটি ফোনকলে তিনি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নিয়েছেন।
আশিক চৌধুরীর বাড়ি চাঁদপুরে হলেও বাবার চাকরির সুবাদে তার বেড়ে ওঠা যশোরে। স্কুল-কলেজের পাট চুকিয়েছেন সিলেট ক্যাডেট কলেজে। এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ)। ২০০৭ সালে স্নাতক শেষেই যোগ দেন দেশের বেসরকারি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে।
ছুটি পেলে বিভিন্ন জায়গায় ছুটে যেতেন রোমাঞ্চের টানে। ২০১১ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করেছেন। তারপর পড়তে যান যুক্তরাজ্যে। তখন থেকে সেখানেই তিনি নিজেকে নতুনভাবে গড়েছেন। তিনি একজন স্কাইডাইভার। যিনি ৪১ হাজার ফুট উঁচু থেকে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে লাফ দেন। যার কারণে তিনি ইতোমধ্যে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বুকে নাম লিখিয়েছেন।

গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখার উপসচিব এ টি এম শরিফুল আলম স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনে আশিক চৌধুরীকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্মসম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে গত ৭ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে আশিক চৌধুরীকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
‘এমন কিছুই তো চাইছিলাম’— সামাজিক মাধ্যমে একের পর এক প্রশংসা
জনমুখী কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসার শিখরে উঠে এসেছেন আশিক চৌধুরী। সাধারণ মানুষ তার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানাচ্ছে এবং অনেকেই তাকে ‘আসল নায়ক’ হিসেবে দেখছেন।
আশিক চৌধুরী প্রসঙ্গে মঞ্জুর হোসেন অয়ন নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, এই লোকটা ড. ইউনূসের থেকেও বড় খেলোয়াড়। দেশ যদি কোনোদিন আমূল বদলে যায়, তোমরা আশিক চৌধুরীর নামটা উচ্চারণ করতে ভুলো না। বিডা এবং বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক যে কতটা শক্ত খেলোয়াড় তা টের পাবা মাস ছয়েক পরেই। এই ছেলেরা ওয়েস্টার্নের আরাম-আয়েশের জীবন ছেড়ে দেশে এসেছে টাকা কামানোর জন্য না; দেশ বদলে দেওয়ার জন্য। তাদের একটা সুযোগ এবং সাপোর্ট দাও প্লিজ।
আরও পড়ুন
ইতোমধ্যেই সে স্টারলিংক নিয়ে এসেছে, নাসার সাথে চুক্তিতে চলে গিয়েছে। বিনিয়োগ হিসেবে বাহিরের একটা ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। তারা এই বছর ১০০ কোটি ডলার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে। পাঁচটা বিশালাকার মালবাহী জাহাজ কিনে নিয়েছে, রিভার ম্যানেজমেন্টের প্ল্যান তৈরি করে বিশাল বিনিয়োগ আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে; চারটা আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল (বিদেশি বিনিয়োগে) তৈরির প্রক্রিয়া চালাচ্ছে; ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ইলেকট্রনিক ট্রেন অথবা বুলেট ট্রেন চালুর জন্য বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যেই ১০টা বৃহত্তর ইকোনমিক জোন তৈরি কার্যক্রম চলছে...

মাত্র কয়েকদিনে এগুলা করেছে সে। যদি সে ৩৬৫ দিন কাজ করার সুযোগ পায় চিন্তা করছেন কই যাবে তার উদ্যোগগুলো... । তার লক্ষ্য ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ নিয়ে আসা এই দেশে। যা দেশের তিন কোটি মানুষের জীবন পরিবর্তন করে দেবে। কম হলেও এক লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। পরবর্তী সরকারে যেই আসুক, আশিক চৌধুরী, খলিলুর রহমান, শফিকুল আলমদের যদি ঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারে এই দেশ সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়া হতে সময় লাগবে তিন বছর। ইনশাআল্লাহ।
আরও পড়ুন
আশিক চৌধুরীর প্রেজেন্টেশন দেওয়া একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে সোহেল রানা নামের একজন লিখেছেন, সরকারের খুব ভালো একটা রিক্রুটমেন্ট হচ্ছে আশিক চৌধুরী। শেষ কবে এমন একজন স্মার্ট, জ্ঞানসম্পন্ন লোক সরকারে দেখেছি মনে করতে পারছি না। বাংলাদেশের সবক্ষেত্রে এ রকম আরও অনেক আশিক দরকার। তাহলে দেশটা একদিন এগিয়ে যাবে।

এদিকে গত ৬ নভেম্বর আশিক চৌধুরী নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে লিখেছেন, সরকারি চাকরির আজকে এক মাস হলো। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি এক দুপুরে প্রফেসর ইউনূস হঠাৎ ফোন করে বললেন, ‘আশিক, দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পাওয়া গেছে। আসবা নাকি?’ আমি নন্দিনীকে জিজ্ঞেস না করেই রাজি হয়ে গেলাম। জানতাম ও কোনোদিন মানা করবে না। সো ৫৯ সেকেন্ডের এক হোয়াটসঅ্যাপ কলে আমরা সিঙ্গাপুরের বিলাসী জীবন ছেড়ে দেশের পথে রওনা দিলাম বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে, বন্ধুদের ভাষায় বাংলাদেশের চিফ মার্কেটিং অফিসার হিসেবে।
তিনি আরও লেখেন, গত এক মাস শুক্র-শনিবারসহ দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেও কূল পাচ্ছি না। প্রায় আড়াই শ সিইও, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করছি তাদের সমস্যাগুলো কোথায়, আর কী করে তার সমাধান করতে পারি। নতুন ইনভেস্টমেন্ট কীভাবে আনতে পারি। চেষ্টা চলছে। ফেল করা যাবে না। আমরা জনগণের সরকার। তাই প্রত্যাশা অনেক। অনেকটা জাতীয় ক্রিকেট দলের মতো। সবাই চায়, আমরা জিতি। কিন্তু পরের বলটা একটু খারাপ হলেই সবাই হা হা করে ওঠে। টিম সিলেকশন, বোলার সিলেকশন, ফিল্ড সেটিং, এসব নিয়ে নানা সমালোচনা। ম্যাচে সবাই ভালো বল করবে না, এটাই স্বাভাবিক। তা নিয়ে দলের সমর্থকরা গালাগাল করবে, তা-ও স্বাভাবিক। দলটা তো আমাদের। কয়দিন আগেও এসব করা কবিরা গুনাহ ছিল। তাই দিনশেষে টায়ার্ড হয়ে ফেসবুক খুলে যখন মনে হয় আমার বউ ও বিরোধী দল, তখন নিজেকে বোঝাই: এটাই তো আসলে বাকস্বাধীনতা। হোক না সমালোচনা। আমরা ভুল করব। তারপর শুধরাব। আমাদের দেশটা আস্তে আস্তে ঠিক রাস্তায় হাঁটবে।
এএসএস/এমজে