বাংলাদেশে বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি তীব্রভাবে ধীর হয়ে গেছে

গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন হলে আগামী ২০২৬-২৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংক।
সংস্থাটি জানিয়েছে, গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দশমিক ২০ শতাংশ কমে ৪ শতাংশে নেমেছে। দেশে এখন আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস অনুযায়ী সংস্কারের কাজ চলছে। এই সংস্কারগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
মঙ্গলবার (০৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসে আয়োজিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেহরিন এ মাহবুবের সঞ্চলনায় সংস্থার ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যঁ পেসমে, প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিসকা লিসেলতে অনসোরগ, অর্থনীতিবিদ নাজমুস সাদাত খান ও অর্থনীতিবিদ ধ্রুব শর্মা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ যে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে তা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। তবে চলতি অর্থবছরে তা কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু সেটিও এশিয়ার গড় জিডিপির থেকে ১ শতাংশ কম হতে পারে। চলতি অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ায় গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
আরও পড়ুন
সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমার মূল কারণ ছিল উচ্চ শুল্কহার। এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় অতিরিক্ত শুল্কহার হওয়ায় বাংলাদেশ জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে পিছিয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে বলা হয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে মারাত্মক ব্যাঘাত সত্ত্বেও পরবর্তী প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বহিরাগত খাতের চাপ হ্রাস পেয়েছে, রিজার্ভ হ্রাস স্থিতিশীল হয়েছে এবংমুদ্রাস্ফীতির চাপ হ্রাস পেয়েছে।
তবে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে বলে মনে করে সংস্থাটি। বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি তীব্রভাবে ধীর হয়ে গেছে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি স্থবির হয়ে পড়েছে। ব্যাংকিং খাত এখনও ঝুঁকিপূর্ণ উচ্চ মাত্রার অনাদায়ী ঋণের কারণে। রাজস্ব আদায় এখনও দুর্বল।
বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণ উল্লেখ করে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে দুর্বল বিনিয়োগের কারণে প্রবৃদ্ধির মন্দা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ব্যবসা পরিচালনার উচ্চ ব্যয়ের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগও কম ছিল।
সংস্থাটির তথ্যমতে, সরকারি বিনিয়োগও হ্রাস পেয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ব্যয় এবং মূলধনী পণ্যের আমদানি যথাক্রমে ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ ও ১০ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। চাহিদা স্থিতিশীল থাকার কারণে রপ্তানিতে প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ভোগকে সমর্থন করেছে।
এমএমএইচ/এসএম