‘৬০০ গ্রেড রডে নির্মাণ ব্যয় কমবে, স্থায়িত্ব বাড়বে’

নির্মাণ ব্যয় হ্রাস, কাঠামোর স্থায়িত্ব বৃদ্ধি এবং পরিবেশবান্ধব সমাধানের দিকটি মাথায় রেখে উচ্চ শক্তিসম্পন্ন ৬০০ গ্রেড রড ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণে এই ধরনের রড ব্যবহারে একদিকে যেমন খরচ কমবে, অন্যদিকে কাঠামোর টেকসই শক্তিও নিশ্চিত হবে।
গত ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘৬০০ গ্রেড রিবারের ব্যয়-সাশ্রয়ী ব্যবহার ও কাস্টমাইজড সমাধান’ শীর্ষক টেকনিক্যাল সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ। কী-নোট উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ ড. এম. শামিম জেড বসুনিয়া।
সেমিনারে ‘ইনহ্যাঞ্চিং ইকোনমি অ্যান্ড সাসটেইনেবলিটি থ্রু হাই-স্ট্রেন্থ রিইনফর্সমেন্ট ইন লার্জ স্কেল কংক্রিট স্ট্রাকচার’ শীর্ষক একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. রাকিব আহসান।
ড. রাকিব আহসান বলেন, ৬০০ গ্রেড রড ব্যবহার করলে বৃহৎ কংক্রিট কাঠামোয় রডের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমানো যায়, অথচ কাঠামোর ভারবহন ক্ষমতা আরও বাড়ে। এর ফলে একদিকে নির্মাণ ব্যয় কমে, অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব সমাধানও নিশ্চিত হয়। তার গবেষণায় দেখা গেছে, প্রচলিত রডের তুলনায় এই রড ব্যবহারে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত রিবার সাশ্রয় সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, উচ্চ শক্তির কারণে কংক্রিটের পরিমাণও তুলনামূলকভাবে কম লাগে, যা পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভবিষ্যতের অবকাঠামো নির্মাণে এই ধরনের রড ব্যবহারে দেশের টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সাশ্রয় একযোগে নিশ্চিত করা যাবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেতু সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘আমাদের দেশে বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্পে এমন উপকরণ ব্যবহার করতে হবে, যা টেকসই, নিরাপদ ও ব্যয়-সাশ্রয়ী। উচ্চ শক্তির রড ব্যবহারে নির্মাণ ব্যয় যেমন কমবে, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে রক্ষণাবেক্ষণ খরচও হ্রাস পাবে। এতে সরকারি অর্থ সাশ্রয় হবে এবং জনসাধারণ আরও নিরাপদ অবকাঠামো পাবে।’
ড. শামিম জেড বসুনিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন একের পর এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পে আন্তর্জাতিক মানের উপকরণ ব্যবহার না হলে কাঠামোগত ঝুঁকি থেকে যাবে। ৬০০ গ্রেড রড কাঠামোর টেকসই শক্তি নিশ্চিত করতে পারে, যা প্রকল্পগুলোর আয়ুষ্কাল বাড়াবে।’
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন মেটালার্জিস্ট ও অভিজ্ঞ স্টিল ইন্ডাস্ট্রি পেশাজীবী ইঞ্জিনিয়ার মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড এশিয়ায় প্রথমবারের মতো কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস (ইএএফ) প্রযুক্তি চালু করেছে, যা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর ব্যবহৃত সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব ও উন্নতমানের স্টিল উৎপাদন প্রযুক্তি।
তিনি বলেন, আধুনিক কোয়ালিটি কন্ট্রোল ব্যবস্থার মাধ্যমে ৬০০ এমপিএ গ্রেডের রড উৎপাদন এখন অনেক সহজ এবং মান বজায় রাখা সম্ভব। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো রড উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইএএফ, বিওএফ বা ওএইচএফ প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমোদন দিলেও ইনডাকশন ফার্নেস (আইএফ) নিষিদ্ধ অথবা বাতিলের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল উদাহরণ হিসেবে থাইল্যান্ডের কথা বলেন, যেখানে ভূমিকম্প ও ভবন ধসের পর ‘আইএফ’ প্রযুক্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভারতের রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে ডিপার্টমেন্টও টেস্ট সার্টিফিকেটে উৎপাদন পদ্ধতির উল্লেখ বাধ্যতামূলক করেছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ রড ব্যবহারে আন্তর্জাতিক মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসব বিষয় বিবেচনায় নেবে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কারিগরি অনুবিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী মো. ফেরদাউস। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালক, প্রকৌশলী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেন, ৬০০ গ্রেড রড কেবল কাঠামোর স্থায়িত্ব ও শক্তি বাড়ায় না, বরং নির্মাণ ব্যয় হ্রাস ও পরিবেশ সংরক্ষণেও ভূমিকা রাখে। এ ধরনের রডের ব্যবহার বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
বিআরইউ
