মূল্যস্ফীতি বাড়লেও মাংসের বাজার ছিল স্থিতিশীল

মাত্র কয়েক দিন পর বিদায় নিতে যাওয়া ২০২৫ সালে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও দেশের মাংসের বাজার ছিল বেশ স্থিতিশীল। বছরজুড়ে সব ধরনের মাংসের দাম ছিল প্রায় অপরিবর্তিত; বরং ব্রয়লার ও দেশি মুরগির দাম কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এর ফলে মাংসের বাজারে গিয়ে ক্রেতারা অনেকটা স্বস্তিতে কেনাকাটা করতে পেরেছেন। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। এতে অতি দরিদ্রের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্রয়ক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে।
চলতি বছরের অধিকাংশ সময় কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ছিল চড়া, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে একমাত্র স্বস্তির বিষয় হলো— বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর মাংসের দাম তেমন বাড়েনি।
সর্বশেষ গত নভেম্বর মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ হয়েছে। অক্টোবর মাসে তা ছিল ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি বাড়ার অর্থ হলো মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে।

গরু ও খাসির দামে পরিবর্তন আসেনি
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত সাড়ে চার বছরে দেশের বাজারে সব ধরনের মাংসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ের মধ্যে গরু ও খাসির মাংসের দাম বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ। অন্যদিকে, মুরগির দাম বেড়েছে ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ। এ ছাড়া মহিষ, হাঁস (দেশি), কবুতরসহ সব ধরনের মাংসের দামই এই সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
টিসিবির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২১ সালের ২০ জুন প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৫৬০ থেকে ৬০০ টাকা, যা গত ২০ ডিসেম্বর ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একই সময়ে খাসির মাংসের দাম প্রতি কেজি ৮০০-৯০০ টাকা থেকে বেড়ে ১১০০-১২০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এ ছাড়া, ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১৩৫-১৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৬০-১৭০ টাকা এবং দেশি মুরগির দাম ৪৫০-৫৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৫০-৬৫০ টাকা হয়েছে।
তবে বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া এই চার ধরনের মাংসের মধ্যে চলতি বছরে গরু ও খাসির দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। অন্যদিকে, ব্রয়লার মুরগির দাম গত ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি কেজি ১৮০-১৯০ টাকা থেকে ১২ শতাংশ কমেছে। আর দেশি মুরগির দাম প্রতি কেজি ৬৫০-৭৫০ টাকা থেকে ১৫ শতাংশের বেশি কমেছে।

মহিষ ও বকরি অপরিবর্তিত, মুরগির দাম কমেছে
আজ (বুধবার) সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মহিষের মাংস প্রতি কেজি ৭২০-৭৮০ টাকা, বকরি ৯০০-১০০০ টাকা এবং মুরগি (কক/সোনালি) ২৮০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মহিষ ও বকরির মাংসের দাম বছরজুড়ে অপরিবর্তিত ছিল এবং কক ও সোনালি মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। এ ছাড়া, মুরগি (টার্কি) প্রতি পিস ২০০০-২৫০০ টাকা, হাঁস (দেশি) ৬০০-৬৫০ টাকা, রাজহাঁস ১৬০০-২০০০ টাকা, হাঁস (চায়না) ১২০০-১৫০০ টাকা, কবুতর ২০০-২২০ টাকা এবং কোয়েল পাখি প্রতি পিস ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব হালাল মাংসজাত প্রাণীর দামও চলতি বছরে কিছুটা কমেছে।
মাংসের দাম বাড়েনি, তাই বিক্রি বেড়েছে
মুগদা বাজারে মুরগি কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী লিয়াকত আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভেবেছিলাম নিত্যপণ্যের দাম কমে আসবে, কিন্তু উল্টো বেড়ে গেল। সরকার পণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন আমরা নির্বাচিত সরকারের ওপর ভরসা করছি। নিত্যপণ্যের দাম না কমলে আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ঢাকায় টিকে থাকাই চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, সবজি, মাছ কিংবা অন্যান্য নিত্যপণ্যের তুলনায় ব্রয়লার মুরগির দাম এ বছর কিছুটা কম ছিল। তবে গরুর মাংসের দাম যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা নিয়মিত কিনে খাওয়া আমাদের আয়ে অসম্ভব। তাই ক্ষতিকর দিক জেনেও ব্রয়লার মুরগি কিনে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে হচ্ছে।
বাসাবো বাজারের ‘জুম্মান মাংস বিতান’-এর স্বত্বাধিকারী মোবারক হোসেন বলেন, গরুর মাংসের দাম দেড় বছরের বেশি সময় ধরে প্রায় স্থিতিশীল রয়েছে। দাম বাড়েনি বলে বিক্রি আগের চেয়ে বেড়েছে। আগে দিনে একটি গরু বিক্রি করাই কঠিন হতো; এখন অনেক দিনেই দুটি গরু কাটতে হয়। বিশেষ করে শুক্রবার ৩-৪টি গরু জবাই করতে হয়।
মানিকনগর বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মোখলেস উদ্দিন বলেন, মুরগির দাম বছরের শুরুতে ২০০ টাকার ওপরে ছিল, তখন বিক্রিও কম ছিল। ফেব্রুয়ারি-মার্চের দিকে দাম কমায় বিক্রি বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় সব ধরনের মুরগির দাম কমেছে।
এমএমএইচ/এমজে
