রাজস্বে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি, তবুও ঘাটতি ৪৫ হাজার কোটি

FM Abdur Rahman Masum

০৬ জুলাই ২০২১, ১০:৩৬ এএম


রাজস্বে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি, তবুও ঘাটতি ৪৫ হাজার কোটি

সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) রাজস্ব আদায়ে রেকর্ড ১৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

রেকর্ড প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে বছর শেষে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতিতে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে পাওয়া সাময়িক হিসাব থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

এনবিআরের তথ্যানুসারে, ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে ৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাময়িক হিসাবে আদায় হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি ৪৫ হাজার কোটি টাকা। যদিও গত অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশের কিছু বেশি। গত ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে ৭৪ হাজার কোটি টাকা।

এনবিআর থেকে পাওয়া সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ১২ মাসে (জুলাই-জুন) আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে প্রতিষ্ঠানটির আদায় যথাক্রমে ৮৫ হাজার কোটি, ৯৪ হাজার কোটি এবং ৭৭ হাজার কোটি টাকা। যেখানে সদ্য সমাপ্ত সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭ হাজার কোটি, ভ্যাট থেকে ১ লাখ ১০ হাজার এবং শুল্ক খাত হতে ৯৪ হাজার কোটি টাকা।

প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক হলেও করোনা প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিবেশে রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে এনবিআরের আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস এ তিন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা-লকডাউন সব কিছুতেই ধাক্কা খেয়েছে। এর মধ্যেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগসহ বেশকিছু পদক্ষেপে রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। যেখানে এনবিআর গত পাঁচ বছরে গড়ে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে রাজস্ব আদায় হয়, সেখানে মহামারির মধ্যেও ১৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এটা বড় ধরনের সাফল্য বলা যায়।

এনবিআর সূত্রে আরও জানা যায়, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সরকার অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বিনিয়োগ সুযোগের কারণে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ পেয়েছে। এনবিআর থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে ২৫ মে পর্যন্ত ১০ হাজার ৪০৪ জন ব্যক্তি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ গ্রহণ করেছেন। যার মাধ্যমে ১৪ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদা হয়েছে। কর হিসাবে এনবিআর পেয়েছে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা মহামারির এ পরিস্থিতিতে রাজস্ব আয় বাড়াতে এনবিআর তথা সরকারের সবার আগে জোর দেওয়া উচিত কর ফাঁকি বন্ধের ওপর। করের আওতা বাড়ানো এবং সব টিআইএনধারীদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে বাধ্য করা উচিত। তাহলে রাজস্ব আয় আরও বৃদ্ধি পাবে। অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বিনিয়োগ সুযোগে যে সুফলের কথা বলা হচ্ছে সেটা সাময়িক ও নীতিবহির্ভূত।

চলতি ২০২১-২২ বাজেট ঘোষণার আগে এনবিআর ২৯ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছিল, যা অনুমোদিত হয়। ফলে নতুন লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা।

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়।

আরএম/এসএম

Link copied