কোনোভাবেই বিদেশে যেন টাকা পাচার না হয় : কৃষিমন্ত্রী
![কোনোভাবেই বিদেশে যেন টাকা পাচার না হয় : কৃষিমন্ত্রী](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2022January/razzak-bg-20220126140630.jpg)
বিদেশে যেন কোনোভাবেই টাকা পাচার না হয় সে বিষয়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ওভার-ইনভয়েস এবং আন্ডার-ইনভয়েসের মাধ্যমে বিরাট অংকের টাকা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চলে যায়। প্রতিনিয়ত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। ব্যবসায়ী ও সরকারি চাকরিজীবীরা দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে। এখানে কাস্টমস অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ডিজিটাইজেশন এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সিস্টেম ডিজিটাল হলে কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কমে যায়। আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে ফাঁকির সুযোগ কমাতে হবে।
তিনি বলেন, শিল্পকারখানা করতে হলে আমাদের অনেক বৈদেশিক মুদ্রা দরকার হবে। বাংলাদেশে শিল্পায়ন হলে অনেক যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হবে। সেটি করতে গেলে আমাদের ৪৭ বিলিয়নের যে রিজার্ভ, সেটি কিন্তু আর থাকবে না। এখন শিল্পায়ন সেভাবে হচ্ছে না। আমরা শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও কাঁচামাল আমদানি করছি। কিন্তু বড় বড় শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি করতে যে বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে, তা আমাদের সঞ্চয় করতে হবে।
কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রতি শপথের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের শপথ নিতে হবে, কোনোভাবেই ব্যবসায়ীরা যেন বিদেশে টাকা পাচার করতে না পারে। ডিজিটাইজেশনের বড় একটি ভূমিকা এখানে আছে বলে আমি মনে করি। আমরা অনেক উন্নত হয়েছি, আমাদের আরও উন্নত ও দক্ষ হতে হবে।
আজ দক্ষিণ কোরিয়া এত উন্নত হলো, তা কীভাবে সম্ভব হয়েছে? কারণ, মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে তাদের দেশে বড় ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। এর মাধ্যমে তারা বৈদেশিক মুদ্রাকে বাঁচিয়ে ভারী শিল্পের দিকে গেছে। শুধু ইলেকট্রনিক্স নয়, সব ভারী শিল্পে তাদের ভূমিকা রয়েছে। কাজেই আমাদেরও মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে কঠোর হতে হবে।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে। এটাকে আরো ত্বরান্বিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে কাস্টমস দিবসের আজকের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবক্ষেত্রে এটি যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে অবশ্যই আমাদের লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারব। এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধার অনেকগুলোই থাকবে না। সে সময় উন্নত দেশের সঙ্গে কাস্টমসের সিস্টেমগুলো কী হবে, কীভাবে আমাদের সুবিধাগুলো নেব, সে সময় কাস্টমস কর্মকর্তাদের আরও দক্ষ হতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের কর জিডিপি অনুপাত অনেক কম। যেটা ১০ শতাংশেও উত্তীর্ণ হচ্ছে না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল কিংবা ভুটানের চেয়ে অনেক কম। আমাদের দুটি জিনিসের প্রতি নজর দিতে হবে। একটি মানি লন্ডারিং, অপরটি কর জিডিপি অনুপাত। এই দুটি বিষয়ে কীভাবে দৃষ্টান্তমূলকভাবে উত্তরণ পেতে পারি, সে বিষয়ে লক্ষ্য রেখে আপনারা কাজ করবেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মামুদ চৌধুরী এবং এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন ২৬ জানুয়ারিকে কাস্টমস দিবস হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকে বাংলাদেশও দিবসটি উদযাপন করছে। এবার ১৪ম আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উদযাপিত হচ্ছে।
এবারের কাস্টমস দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘তথ্য সংস্কৃতি বিকাশ এবং তথ্য ইকোসিস্টেম বিনির্মাণের মাধ্যমে ডিজিটাল কাস্টমসের সম্প্রসারণ।’ এই প্রতিপাদ্যে তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে- ডিজিটাল কাস্টমসের সম্প্রসারণ, তথ্য-উপাত্ত চর্চা ও তথ্য প্রতিবেশ।
আরএম/জেডএস/জেএস