আন্দোলনেও পেছাচ্ছে না মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা

Tanvirul Islam

০৫ মার্চ ২০২১, ০১:১১ পিএম


আন্দোলনেও পেছাচ্ছে না মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা

পরীক্ষার তারিখ পেছানোর জন্য মানববন্ধন করেছে মেডিকেলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা

পেছাচ্ছে না চলতি বছরের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। আগের নিয়মেই আগামী ২ এপ্রিল এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ২৮২টি আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর। শুক্রবার (৫ মার্চ) স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু ইউসুফ ফকির ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ঈদুল ফিতরের পর নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মেডিকেল ভর্তিচ্ছুরা। তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে ২ এপ্রিল মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে তাদের এবং অভিভাবকদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. মো. আবু ইউসুফ ফকির বলেন, ‘দেশে এখন অনেকটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। করোনা প্রতিরোধে সারাদেশে টিকা কার্যক্রমও চলছে। এর চেয়ে খারাপ অবস্থাতেও আমাদের মেডিকেল শিক্ষার্থীরা বসে থাকেনি। আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিপূর্ণভাবে আরও আগেই শুরু হয়েছে। সুতরাং এখন পরীক্ষা পেছানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর তো অক্টোবর-নভেম্বরে পরীক্ষা হয়ে যায়। এ বছর করোনার কারণে তারিখ এমনিতেই অনেকটা পিছিয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমি বলতে পারি, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার তারিখ পেছানোর সম্ভাবনা খুবই কম।’

dhaka post
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু ইউসুফ ফকির

আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘কিছু ছেলেমেয়ে আছে যাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি কখনোই থাকে না। তারা সবসময় মনে করে পরীক্ষা পেছালে ভালো হয়। কিন্তু পেছালেও যে তাদের খুব বেশি একটা কিছু হয়ে যায়, এ রকম না। এটি একটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। এখানে সিট সংখ্যাও সীমিত। যারা ভালো করবে তারা টিকবে। আর এভাবে পরীক্ষার সাজেশন পিছিয়ে দিলে তো সামগ্রিকভাবে তাদেরই ক্ষতি।’

পরীক্ষা এপ্রিলের ২ তারিখেই হবে। এখন পর্যন্ত এটা পেছানোর সম্ভাবনা বা আমাদের কোনো চিন্তা নেই। আমরা পরীক্ষা পেছাতে চাচ্ছি না। আমাদের মেডিকেলের সব পরীক্ষাই হচ্ছে। এভাবে পিছিয়ে পিছিয়ে যে দেশ অচল হয়ে যাচ্ছে, সে খবর কি তাদের আছে?

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু ইউসুফ ফকির

মেডিকেল কলেজগুলো কবে খুলছে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘মেডিকেল কলেজগুলো তো আরও আগে থেকেই খুলে দেওয়া হয়েছে। করোনার সময় বিভিন্ন পরীক্ষা-ক্লাস শুরু হয়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থীরাও অনেক আগেই ক্যাম্পাসে চলে এসেছে। আমাদের কোনো কার্যক্রম থেমে নেই।’

স্কুল-কলেজগুলোতে ছুটির সময় বাড়ছে, এক্ষেত্রে আপনাদের আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্কুল কলেজগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। আর মেডিকেল কলেজগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যখন চাইবে তখন তাদের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করবে। কিন্তু আমাদের মেডিকেল শিক্ষার্থীরা এভাবে বসে থাকলে হবে না। দেশের পরিস্থিতি যাই হোক, শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করে তাদেরকে চিকিৎসা সেবায় আসতে হবে। আমাদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও করোনার সময় থেকেই শিক্ষা কার্যক্রম চলে আসছে।’

গতকাল (৪ মার্চ) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক মানববন্ধনে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমতা না রেখে ২ এপ্রিল ভর্তি পরীক্ষা আয়োজিত হলে একাডেমিক ক্ষেত্রেও দেখা দিতে পারে বিভিন্ন সমস্যা। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি বিষয়ক জটিলতা। ২ এপ্রিল পরীক্ষা আয়োজিত হলে তিন চারদিনের মধ্যে প্রকাশিত হবে ফল। তার এক থেকে দুই মাসের মধ্যে শেষ হবে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি কার্যক্রম। যদি কোনো শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ না পায়, তবে সে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদে পড়বে। আর যদি সে সুযোগও না হয়, তবে সে ভর্তি হবে কোনো বেসরকারি মেডিকেল কলেজে।

তারা বলেন, এবার সব বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে এমন এক সময়ে যখন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরুই হয়নি। তাহলে কীভাবে একজন শিক্ষার্থী সিদ্ধান্ত নেবে, সে লাখ লাখ টাকা খরচ করে আগেই বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে যাবে, নাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য দুই মাস অপেক্ষা করবে? আর যদি দুই মাস অপেক্ষা করার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না হয়, তখন যে তার কাছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগও থাকবে না।

পরীক্ষা আয়োজনের আগে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের টিকা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ভর্তি বিষয়ক জটিলতা নিরসনে দেশের বাকি সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমতা রেখে ঈদুল ফিতরের পর মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।

মেডিকেলে ভর্তিতে ২৮২টি আসন বাড়ছে

দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তিতে ২৮২টি আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুনামগঞ্জে নতুনভাবে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ এবং অন্য ১৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তির বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, ওই বছর সরকারি মেডিকেল কলেজের আসনসংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৬৮। আর এবার নতুন একটি মেডিকেল কলেজে (বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ, সুনামগঞ্জ) প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি নেবে। এতে আসন সংখ্যা রয়েছে ৫০টি। তাছাড়া আগের মেডিকেলগুলোতে এবার আসন সংখ্যা বেড়েছে ২৩২টি। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে সব মিলিয়ে ২৮২টি আসন বাড়ছে।

আগের নিয়মেই হবে ভর্তি পরীক্ষা

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এবার মেডিকেলের পরীক্ষায় ভর্তি আবেদন পড়েছে বিগত বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। গত বছর আবেদন পড়েছিল ৭২ হাজার ৩২৮টি। এ বছর শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিটি আসনের বিপরীতে মোট ২৮ জন শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেলে ভর্তির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সম্পূর্ণ আগের নিয়মেই এ পরীক্ষা হবে।

এবার ভর্তির আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়তে পারে, এমন সম্ভাবনা থেকেই এক লাখ ২১ হাজার পরীক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। পরে এ সংখ্যা বাড়িয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার করা হয়েছে। তবে ২ মার্চের আগে আবেদনকারীদের চূড়ান্ত সংখ্যা জানা যাবে না। অতিরিক্ত চাপ সামালতে কেন্দ্রের সংখ্যা না বাড়িয়ে ভেন্যুর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।

অধিদফতর সূত্র বলেছে, দেশে সরকারিভাবে পরিচালিত ৩৭টি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা ৪ হাজার ৩৫০টি। মোট আসনের মধ্যে সাধারণ কোটায় ৪ হাজার ২৩০টি, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় (২ শতাংশ) ৮৭টি, উপজাতি কোটায় নয়টি, অ-উপজাতি কোটায় তিনটি এবং অন্যান্য জেলার উপজাতি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য আটটি আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

দেশের সরকারি, বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস এবং ডেন্টাল কলেজ ও ইউনিটগুলোর বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হবে। বরাবরের মতো সারাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টালের জন্য একটিই গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

টিআই/এমএইচএস/এমএমজে

Link copied