গণমাধ্যমে কথা বলতে পারবেন না মুদ্রণকারী : এনসিটিবির নতুন খড়গ

নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য ছাপানো নিম্নমানের পাঠ্যবই। প্রাথমিক স্তরের প্রায় ১০ কোটি বই বিগত ১৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিম্নমানের কাগজে ছাপা হচ্ছে। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে আর বাকি ১৮ দিন। অথচ এখনো ছাপা হয়নি মাধ্যমিকের ৯ কোটির বেশি বই। অন্যদিকে অষ্টম ও নবম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের পাণ্ডুলিপিই চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিদিনই সংবাদ প্রচার হচ্ছে। সেই সংবাদের ওপর খড়গ বসাতে চায় জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
নিম্নমানের বই ছাপানোর দায় এড়াতে নতুন কৌশল হিসেবে পাঠ্যবই মুদ্রণের সঙ্গে যুক্ত মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী/ব্যবস্থাপককে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
সম্প্রতি সংস্থাটির সচিব নাজমা আখতার স্বাক্ষরিত এমন নির্দেশনা সব মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী/ব্যবস্থাপক ইন্সপেকশন এজেন্সিকে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের কার্যাদেশপ্রাপ্ত সব মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী/ব্যবস্থাপক, আপনার মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে (যেকোনো সংস্থা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া কিংবা প্রিন্ট মিডিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত কিংবা অন্য যেকোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় প্রদানকারী) প্রবেশ করা, ছবি তোলা, পাঠ্যপুস্তক কিংবা পাঠ্যপুস্তকের ফর্মা নিয়ে কথা বলা যাবে না।
আরও পড়ুন
অভিযোগ রয়েছে, মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তির নির্দেশে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম ও সচিব নাজমা আখতার সমন্বয় করে এ নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসের নিম্নমানের বই ছাপার সংবাদ প্রচারের পর তা বন্ধ করতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি।
নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর বাকি ১৮ দিন। জানা গেছে, এখনো ছাপা শুরু হয়নি মাধ্যমিকের প্রায় ৯ কোটি বই। যেসব বই ছাপা হয়েছে, সেগুলোও নানা জটিলতায় মাঠপর্যায়ে পৌঁছানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে নতুন শিক্ষাক্রমের অষ্টম ও নবম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের পাণ্ডুলিপি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আবার যেসব বই ছাপা হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই গতবারের থেকেও নিম্নমানের কাগজে ছাপা।
প্রাথমিকের প্রায় ১০ কোটি বই বিগত ১৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিম্নমানের কাগজে ছাপা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরের ৯৮টি লটের মধ্যে ৭৫ লটের কাজ পেয়েছে অগ্রণী প্রিন্টার্স। প্রাথমিকের বই ইন্সপেকশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ইনফেন্টি এজেন্সির নেপথ্যে রয়েছে অগ্রণী প্রিন্টার্সের মালিক কাউসার আজক রুবেল। তাই এবার নিজের মতো করে নিম্নমানের কাগজে বই ছাপিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রাথমিকে অন্য যেসব প্রতিষ্ঠান অগ্রণীর কাছ থেকে কাগজ কেনেনি তাদের ইন্সপেকশন এজেন্সি দিয়ে হয়রানি করানো হয়। বাধ্য হয়ে তারাও রুবেলের কাছ থেকে নিম্নমানের কাগজ কিনে বই ছাপান।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অগ্রণী প্রিন্টার্সের মালিক রুবেলকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এনএম/এসএসএইচ