শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতিমুক্ত পরিচালনা পর্ষদ চায় অভিভাবক ফোরাম

৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি স্থগিত করে অ্যাডহক কমিটি করা হয়েছে। এসব কমিটিতে আগের মতোই রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রভাব বিস্তার করছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে পরিচালনা পর্ষদ থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অপসারণের দাবি জানিয়ছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম।
বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানী সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু।
এ সময় তিনি শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ ফিরিয়ে আনা ও অনিয়ম দুর্নীতি রোধ করতে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদা সম্পন্ন কর্মকর্তাদের প্রেষণে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান। সিভিল প্রশাসকের চেয়ে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করলে দুর্নীতি, ভর্তি বাণিজ্য কমবে বলে মনে করেন তিনি।
জিয়াউল কবির দুলু বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কমিশন গঠন করলেও শিক্ষার ভয়াবহ অবনতি হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠিত করা হলো না। শিক্ষায় দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত অনিয়ম-দুর্নীতি অবসানে দেশের জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সমন্বয়ে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করে কিছু সুপারিশ নিয়ে একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন করার দাবি জানান তিনি। একইসঙ্গে শিক্ষার বিভিন্ন অধিদপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে তাদের আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শক্তিশালী জবাবদিহিমূলক মনিটরিং সেল গঠন করে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কর্মকাণ্ড ও অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও দাবি জানান।
আরও পড়ুন
শিক্ষাকে জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে দুলু বলেন, শিক্ষা জাতীয়করণ হলে শিক্ষকদের বিদ্যমান সমস্যা ৯৫ শতাংশ থাকবে না। এছাড়া শিক্ষার্থীর টিউশন ফি নীতিমালা কার্যকর, ভর্তি নীতিমালা বাস্তবায়ন, পাঠক্রম নির্ধারণ, শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য নিষিদ্ধে কার্যকর উদ্যোগ, মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ, বিগত সরকারের সময়ে নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্তদের চিহ্নিত করে আইনে আওতায় আনা ও শিক্ষকদের বহিষ্কার করার দাবি জানান তিনি।
ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডিতে গ্র্যাজুয়েটের নিচে কোনো সদস্য থাকতে পারবে না এমন প্রজ্ঞাপন জারি করা, কমিটির নির্বাচনে জাতীয় নির্বাচনের মতো প্রচার করতে না পারার বিধান করার দাবি জানান অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি।
তিনি বলেন, কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার নামে সনদ বাণিজ্য চলছে। এদের চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি বাতিল করতে হবে। ইতোমধ্যে যাদের এ ধরনের সনদ প্রদান করা হয়েছে তাদের যাচাই-বাছাই করে সনদ বাতিল করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এছাড়াও বিগত সরকারের সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে যারা বিভিন্ন মামলার আসামি হয়েছেন তাদের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান দুলু।
এসব দাবি আদায়ে তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে– শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া, জনমত গঠনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দাবি-দাওয়া সম্বলিত লিফলেট বিতরণ ও আগামী ৩ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সহ সভাপতি ও ঢাকা কলেজের অভিভাবক ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম উদ্দিন আহমেদ, সহ সভাপতি ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য মো. আহছান উল্লাহ মানিক, ফোরামের নেত্রী ও ভিকারুন নিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক দিলারা আক্তার প্রমুখ।
এনএম/এসএসএইচ