ভিন্ন প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস
ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ২৪ জানুয়ারি (রোববার) পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে সীমিত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
তবে করোনার কারণে এবার তেমন কোনও আয়োজন নেই। রোববার বিকেলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি একটি সেমিনারে বক্তব্য রাখবেন বলে জানা গেছে।
করোনার কারণে গোটা বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থা যখন টালমাটাল অবস্থা তখন দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরতেই এ দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় এক বছর ধরে ক্লাসের বাইরে কোটি কোটি শিক্ষার্থী। অনলাইনে বা দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। এরমধ্যে বাতিল হয়েছে অসংখ্য পরীক্ষা। মহামারির এমন ভয়াল ছোবলের মধ্যে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে কি করণীয় তার একটি ধারণা দেবেন শিক্ষামন্ত্রী।
করোনাকালে গণসাক্ষরতা অভিযানের এক গবেষণা অনুসারে- সংসদ টিভি, অনলাইন, রেডিও ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হলেও বাস্তবে ৬৯ দশমিক পাঁচ শতাংশ শিক্ষার্থীই অংশ নিতে পারেনি। এটি গ্রাম ও শহরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়িয়েছে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে প্রায় পৌনে দুই কোটি শিক্ষার্থী।
এছাড়া মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় এক কোটি, কলেজে প্রায় অর্ধকোটি ও বাকিরা উচ্চ শিক্ষা, মাদ্রাসা, ইংরেজি মাধ্যমসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ‘এডুকেশন ওয়াচ’ নামে গবেষণা প্রতিবেদনে গণসাক্ষরতা অভিযান জানায়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৬৯ দশমিক পাঁচ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন বা অন্যান্য কার্যক্রমে অংশ নেয়নি। এর আগে ব্র্যাকের জরিপে বলা হয়েছিল, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনের ক্লাসে অংশগ্রহণ করেন।
বিপাকে রয়েছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরাও। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে ৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর পরিবার মৌলিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম থাকলেও গত বছর তা অনেক কমে আসে। আর ২০১৯ সালে শিক্ষকদের ৯৩ শতাংশ পরিবার মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হলেও বিদায়ী বছরে তা কমে হয়েছে ৬৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
এদিকে ইউনেস্কো বলছে, ১৯০টিরও বেশি দেশের ১৬০ কোটি শিক্ষার্থীর জীবনকে প্রভাবিত করেছে করোনাভাইরাস। ৫০ কোটির বেশি শিক্ষার্থী অনলাইন বা অন্যান্য কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস-২০২১ উপলক্ষে এক ধারণাপত্রে এ তথ্য তুলে ধরেছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থাটি।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৪ জানুয়ারি (রোববার) সদস্য দেশগুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস পালিত হচ্ছে। ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য এবং নানা আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমের মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে এ দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
ইউনেস্কো বলেছে, করোনা মহামারির প্রভাবে বিশ্বজুড়ে শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। ফলে বিশ্বের ১৬০ কোটি শিক্ষার্থীর জীবনকে প্রভাবিত করেছে। বিভিন্ন দেশে দূরশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প উপায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চললেও এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী এ কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেননি।
এনএম/ওএফ