বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হবে দিলুকে

না ফেরার দেশে চলে গেছেন অভিনেতা, নাট্য নির্মাতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলু। মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল ৬টা ৩৫মিনিটে রাজধানী ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।
দিলুর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন মঞ্চ ও টিভি ব্যক্তিত্ব খ ম হারূন।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় দিলুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল শান্ত- মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে। সেখানকার মসজিদে জানাজা শেষে বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নেওয়া হবে তাঁকে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
মুজিবুর রহমান দিলুর জন্ম ১৯৫২ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে। তিনি অভিনয় জীবন শুরু করেন মঞ্চ থেকে। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে অভিনয়শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। তবে বেশ কিছুদিন ধরে তিনি অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন।
মুজিবুর রহমান দিলুর উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক হলো-‘আমি গাধা বলছি’, ‘নানা রঙ্গের দিনগুলি’, ‘জনতার রঙ্গশালা’ প্রভৃতি। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে-‘নীল পানিয়া’, ‘মহাপ্রস্থান’, ‘কিছু তো বলুন’, ‘তথাপি’, ‘আরেক ফাল্গুন’। উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিক-‘সময় অসময়’ এবং ‘সংশপ্তক’।
বিটিভিতে প্রচারিত হুমায়ূন আহমেদের ‘সংশপ্তক’-এ ‘বড় মালু’ চরিত্রে অভিনয় করে আলোচিত হন দিলু। আর তাই অনেকে তাঁকে ‘বড় মালু’ নামেই চেনেন। আশির দশকে ছোটদের জনপ্রিয় গল্প ও সংগীতের সমন্বয়ে শ্রুতি নাটক ‘টোনাটুনি প্রকল্প’-এর নির্দেশক ছিলেন দিলু। তার কণ্ঠে পাতা ওল্টাও, শিশুদের মধ্যে অসম্ভব জনপ্রিয় ছিল যা আজও অনেকেই মনে রেখেছেন। দিলু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘ঢাকার ড্রামা’ নামের নাট্যগোষ্ঠী।
স্কুলে পড়ার সময়ই স্বাধিকার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন দিলু। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে যে মিছিলে গুলিতে আসাদ শহীদ হয়েছিলেন সেই মিছিলে ছিলেন দিলুও। ১৯৭০ সালে মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েই যুদ্ধে চলে যান তিনি। ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে ঢাকায় সরাসরি রণাঙ্গনে যোগ দেন। নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ছিলেন সেকেন্ড ইন কমান্ড। সেসময় তিনি ঢাকায় কয়েকটি দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেন।
স্ত্রী রানী রহমান, দুই ছেলে অয়ন রহমান, অতুল রহমান ও মেয়ে তানজিলা মুজিবকে নিয়ে ঢাকার উত্তরায় বসবাস করতেন প্রয়াত এই অভিনেতা। নাট্যকার আতাউর রহমান তাঁর বড় ভাই। অভিনয়ের পাশাপাশি দিলু শান্ত মরিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাহী পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন।
২০০৫ সালে গুলেন বারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন কোমায় ছিলেন দিলু। পরে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন। তবে এবার আর রক্ষা হলো না। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত কিছুদিন থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শেষ পর্যন্ত বিদায় জানালেন পৃথিবীকে।
দেশের প্রখ্যাত এই মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শোবিজে। অনেকেই প্রিয় অভিনেতার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।
আরআইজে