জমে উঠেছে ‘ইফতার কূটনীতি’, কারণ কী
করোনা মহামারিতে দুই বছর বন্ধ থাকার পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের আলোচনায় ‘ইফতার রাজনীতি’। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির মধ্যে ইফতার আয়োজনের সংস্কৃতি থাকলেও পিছিয়ে রয়েছে বাম দলগুলো। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবারের ইফতার আয়োজনে সংযোজন হয়েছে ‘ইফতার কূটনীতি’র।
ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির আয়োজনে কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকেও কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দূতাবাসের ইফতারে যোগ দিচ্ছেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। আবার কোন দলের ইফতার আয়োজনে কোন দেশের কূটনীতিক অংশ নেননি— এ নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা।
জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। ইফতার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচনা-সমালোচনা সৌজন্যবোধের মধ্যে পড়ে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। অন্যদিকে, এবারের ‘ইফতার কূটনীতি’ সফল হয়েছে— দাবি বিএনপি নেতাদের।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির আয়োজনে কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকেও কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দূতাবাসের ইফতারে যোগ দিচ্ছেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা
গত ১৫ এপ্রিল রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির আয়োজনে কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার অনুষ্ঠিত হয়। গত দুদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে, বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকরা ওই ইফতার আয়োজনে যোগ দেননি। সেসব দেশের নাম উল্লেখ করে এমন দাবি করা হচ্ছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও চলছে নানামুখী আলোচনা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আওয়ামী লীগের ইফতার আয়োজনে কারা এসেছিলেন, সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে মিথ্যা প্রচার চালানোর কোনো সুযোগ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির ইফতার আয়োজনে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি মান্টিটস্কি, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রস্টার, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড, মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ হাশিম, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার ভেন্ডসেন ও পাকিস্তানের সহকারী হাইকমিশনার অংশ নেন।
সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরাও ২৩ এপ্রিল কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করেছি। ইফতারে আমি একজনকে দাওয়াত দিলাম, তিনি আসলেন বা না আসলেন— সেটা তার ইচ্ছা। অনেকের সমস্যা থাকতেই পারে। এটা নিয়ে কথা বলাটা আমি মনে করি সৌজন্যবোধের মধ্যে পড়ে না।
গত ১২ এপ্রিল কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করে বিএনপি। ওই আয়োজনে আট দেশের রাষ্ট্রদূত ও ১১ দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এছাড়া বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিসহ মোট ২৪ কূটনীতিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির ফরেন উইংয়ের এক সদস্য দাবি করেন, ইফতার রাজনীতিতে কূটনৈতিকভাবে এবার বিএনপি সফল হয়েছে। কারণ, গত ১২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ইফতারে প্রায় সব দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত, যুক্তরাজ্য ও ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন।
‘যে বিষয়টি এখানে আলোচ্য, সাধারণত গত কয়েক বছর বিএনপির ইফতারে ভারতের হাইকমিশনার অংশ নিতেন না। তাদের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতেন। কিন্তু এবার হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী সশরীরে অংশ নেন।’
বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীর অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে একটা কারণও ব্যাখ্যা করেন ওই নেতা। তার ভাষ্য, ‘ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের ইফতারে এবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদের মতো প্রভাবশালী নেতারা অংশ নিয়েছিলেন। ওই কারণে হয়তো এবার ভারতের হাইকমিশনার প্রতিনিধি না পাঠিয়ে নিজেই অংশ নেন।’
তবে, গত ১২ এপ্রিল কূটনীতিকদের সম্মানে বিএনপির ইফতারে চীন, সৌদি আরব ও প্রভাবশালী একটি দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধি অংশ না নেওয়ার কারণ কী হতে পারে— সেটা নিয়ে দলটির মধ্যে আলোচনা চলছে। বিএনপির কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে গত ১১ এপ্রিল ভারতীয় দূতাবাসের আয়োজনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবারের রমজানে ‘ইফতার রাজনীতি’ বেশ জমে উঠেছে। সব ঘরানার রাজনৈতিক দল তাদের ইফতারে পেশাজীবী ও রাজনীতিবিদদের মিলনমেলা ঘটানোর চেষ্টা করছে। তবে, বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি তাদের ইফতার রাজনীতিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন কূটনীতিকদের।
গত ১২ এপ্রিল কূটনীতিকদের সম্মানে বিএনপির ইফতারে চীন, সৌদি আরব ও প্রভাবশালী একটি দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধি অংশ না নেওয়ার কারণ কী হতে পারে— সেটা নিয়ে দলটির মধ্যে আলোচনা চলছে। বিএনপির কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে অপ্রকাশ্যে বা অঘোষিতভাবে ক্ষমতার পালাবদলে একটা ভূমিকা রাখেন কূটনীতিকরা। তাই দলগুলো তাদের ইফতারে কত বেশি কূটনীতিকের মেলবন্ধন বা সমাবেশ ঘটাতে পারে, সেই চেষ্টা চালায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাম রাজনৈতিক দলের শীর্ষ এক নেতা বলেন, বাংলাদেশে ইফতার রাজনীতিতে পিছিয়ে আছে বাম দলগুলো। আর্থিকভাবে রুগ্ণ বাম দলগুলো সাধারণত ইফতারের আয়োজন করে না।
এইউএ/এএইচআর/এমএআর/