বিধিমালা তোয়াক্কা করেন না, সম্পদের হিসাবও দেন না তারা

সরকারি কর্মচারীদের প্রতি পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিধান থাকলেও তা মানেন না অনেকে। সরকারি চাকরির আচরণ বিধিমালার তোয়াক্কাই করেন না তারা। আর যাদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার কথা, সংশ্লিষ্ট সেই কর্তৃপক্ষও এক্ষেত্রে বেশ উদাসীন। এ বিষয়ে সরকারি কর্মচারীদের আচরণবিধি ক্ষুণ্ন হলেও নেওয়া হয় না কোনো ব্যবস্থা। এ কারণে সম্পদের হিসাব দিতে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে চরম অনীহা।
জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে সরকারি কর্মচারীদের পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান চালু করা হয়। জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’-এ এটি যুক্ত করা হয়। সেখানে বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের প্রতি বছর সম্পদের হিসাব নিজ দপ্তরে জমা দিতে হবে।
তবে, ২০০২ সালে ওই বিধিমালা সংশোধন করে এক বছরের পরিবর্তে প্রতি পাঁচ বছর পরপর কর্মচারীদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান চালু করা হয়। কিন্তু চার দশক ধরে এ নিয়ম পুরোপুরি প্রতিপালন করা যায়নি। উল্টো সংশোধিত বিধিমালায় সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব ইস্যুতে ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
১৯৭৯ সালে সরকারি কর্মচারীদের পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান চালু করা হয়। জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’-এ এটি যুক্ত করা হয়। সেখানে বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের প্রতি বছর সম্পদের হিসাব নিজ দপ্তরে জমা দিতে হবে। তবে, ২০০২ সালে ওই বিধিমালা সংশোধন করে এক বছরের পরিবর্তে প্রতি পাঁচ বছর পরপর কর্মচারীদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান চালু করা হয়। কিন্তু চার দশক ধরে এ নিয়ম পুরোপুরি প্রতিপালন করা যায়নি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিধিমালা উপেক্ষা করে সম্পদের হিসাব না দেওয়া এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে কারও কোনো জবাবদিহিতাও নেই। নিয়ম মানাতে অমান্যকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে মত দিয়েছেন তারা।
যা আছে বিধিমালায়
১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার ১৩ বিধিতে সম্পদের হিসাব দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। বিধিমালায় ‘সম্পত্তির ঘোষণা’ উপ-শিরোনামের ১৩ বিধিতে বলা রয়েছে, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে চাকরিতে প্রবেশের সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তার অথবা তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন বা দখলে থাকা শেয়ার, সার্টিফিকেট, সিকিউরিটি, বিমা পলিসি এবং মোট ৫০ হাজার টাকা বা ততোধিক মূল্যের অলংকারাদিসহ সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে সরকারের কাছে ঘোষণা দিতে হবে। এ ছাড়া, এ ঘোষণায় নিচের বিষয়াদি উল্লেখ থাকবে-
(এ) যে জেলায় সম্পত্তি অবস্থিত ওই জেলার নাম। (বি) ৫০ হাজার টাকার অধিক মূল্যের প্রতিটি প্রকারের অলংকারাদি আলাদাভাবে প্রদর্শন করতে হবে। (সি) সরকারের সাধারণ বা বিশেষ আদেশের মাধ্যমে আরও যেই সমস্ত তথ্য চাওয়া হয়।
আরও পড়ুন
বিধিমালায় আরও বলা রয়েছে, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ডিসেম্বর মাসে উপবিধি একের অধীনে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দেওয়া ঘোষণায় অথবা বিগত পাঁচ বছরের হিসাব বিবরণীতে প্রদর্শিত সম্পত্তির হ্রাস-বৃদ্ধির হিসাববিবরণী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাখিল করতে হবে।
নিয়ম মানছেন না কর্মচারীরা
সরকারি দফতরগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচ বছর পরপর সরকারি কর্মচারীর সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান ১৯৭৯ সালে চালু হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সম্পদের হিসাব জমা দিতে কড়া নির্দেশ দেওয়া হলে সে সময় সব কর্মচারী তা দিয়েছিলেন। নানা দিকে আলোচনা উঠলে ২০১৫ সালে আরেক দফা সরকারি কর্মচারীর সম্পদের হিসাব জমা দিতে সরকার থেকে বলা হলে গুটিকয়েক মন্ত্রণালয় তাদের নিয়ন্ত্রিত সংস্থা বা দফতরের কর্মচারীর সম্পদের হিসাব নিতে পারলেও অধিকাংশই ব্যর্থ হয়।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের পর সম্পদ বিবরণী দাখিল ও স্থাবর সম্পত্তি অর্জন বা বিক্রির নিয়ম মানতে সব মন্ত্রণালয়ে ২০২১ সালের ২৪ জুন চিঠি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু এতে সাড়া দেননি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপর ২০২২ সালের মার্চে আবার তাগিদ দিয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তারপরও সাড়া মেলেনি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ সরকারি কর্মচারী সম্পদের হিসাব জমা দেন না। হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে নিয়ম অনুসরণ করেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, সরকারের কিছু দপ্তরের চিত্র ভয়াবহ। বিগত ১৫ বছরেও এসব দপ্তরে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী একবারও সম্পদের হিসাব জমা দেননি!
এক্ষেত্রে আচরণবিধি অমান্যকারী সরকারি কর্মচারীর বিষয়ে কর্তৃপক্ষও কঠোর অবস্থানে যায় না। এ সুযোগে সম্পদের হিসাব জমা দিতে কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অনীহা তৈরি হয়েছে। কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন না হওয়া এবং কোনো ধরনের নজরদারি না থাকায় এটি একপ্রকার অকার্যকর নিয়মে পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক মন্ত্রণালয়ের কর্মরতরা সম্পদের হিসাব দিচ্ছেন না। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বা কঠোর হচ্ছে না। এ সুযোগে সম্পদের হিসাব দিতে চরম অনীহা তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে।
‘অতীতে দেখেছি, কয়েকটি মন্ত্রণালয় বিচ্ছিন্নভাবে তাদের অধীনস্ত কর্মচারীদের কাছ থেকে সম্পদের হিসাব চেয়েও তেমন সাড়া পায়নি। এটা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। তারা মনে করছেন, আমরা তো সরকারি কর্মকর্তা, আমাদের সম্পদের কীসের হিসাব!’
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘যেহেতু কেউ তদারকি করে না বা জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হয় না, তাই সবাই গা বাঁচিয়ে চলতে পছন্দ করে। এটা যেন এখন অলিখিত সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।’
দুর্নীতিবিরোধী ধারা থাকতে হবে মন্ত্রণালয়ের আইনে
গত ১০ জুন রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, কোনো মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিধিতে দুর্নীতি দমনের কোনো কথা বলা নেই। সব মন্ত্রণালয় যেন দুর্নীতির গ্যারেজ খুলে রেখেছে। মন্ত্রণালয়গুলোর আইনে দুর্নীতিবিরোধী ধারা সংযোজন করতে হবে।
‘দুর্নীতি প্রমাণ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। দুদকের একার পক্ষে সব ধরনের দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়।’
মন্ত্রণালয়গুলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না— দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘তারা ব্যবস্থা নিলে এত অভিযোগ দুদকে আসত না। তাদের পক্ষ থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে দুদকে অভিযোগ কম আসবে— দুদক এটাই চায়। সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি যেন না হয়, সে জন্য প্রতিরোধ করা জরুরি।’
সম্পদ-বিবরণী জমা দেওয়ার জোর দাবি সংসদে
সম্প্রতি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে প্রত্যাহার হওয়া সদস্য মতিউর রহমানের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়ার পর সরকারি চাকরিজীবীদের দুর্নীতির বিষয় নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সমালোচনার আগুনে ঘি ঢেলেছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরাও (এমপি)। জাতীয় সংসদের অধিবেশনে সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতির ব্যাপকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তারা।

গত ২৫ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-২ আসনের এমপি মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, দুর্নীতি সরকারের সমস্ত অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে। জিরো টলারেন্স নীতির পরও দুর্নীতি দমন বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। আজ বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা যায়, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়, নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
‘বাজার কখনও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, যদি বাজারে দুর্নীতির অবাধ প্রবাহ থাকে। ফলে সেটি কখনও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, এবার দুটি ঘটনা সারা দেশে আলোচিত হয়েছে। একটি গরু এক কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। এটি কারা কিনল, কেন কিনল? বৈধ উপায়ে আয়ে এটি কেনা যায় না। অবৈধ উপায়ে যাদের আয়, তারা খামখেয়ালিভাবে কিনতে পারে। একটি ছাগল কিনল ১৫ লাখ টাকা দিয়ে। এটি কারা করতে পারে? যাদের অবৈধ আয় আছে, তারা। বৈধ আয় হলে টাকা কখনও পানিতে ফেলা যায় না। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে দুর্নীতি আগে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচনের আগে আমাদের হলফনামা দিতে হয়, সম্পদের বিবরণ দিতে হয়। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের হলফনামা দিতে হয় না। আমার প্রস্তাব থাকবে, চাকরিতে নিয়োগের সময় হলফনামা বাধ্যতামূলক এবং প্রতি পাঁচ বছর পর বা পদোন্নতির সময় হলফনামা দিতে হবে, যাতে তার সম্পত্তির পরিমাণ জাতি জানতে পারে।
‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৯০ শতাংশই দুর্নীতিগ্রস্ত’— এমনটি দাবি করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) এমপি (ঠাকুরগাঁও-৩) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। গত ২৯ জুন জাতীয় সংসদে অর্থবিল ২০২৪-এর সংশোধনীর ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, কাস্টমসে (শুল্ক বিভাগ) যারা চাকরি করেন, তাদের প্রত্যেকের ঢাকা শহরে দুই-তিনটি বাড়ি আছে। বন বিভাগে যারা চাকরি করেন, তাদের দুই-তিনটি করে সোনার দোকান। প্রধানমন্ত্রী যদি পদক্ষেপ নেন, তাহলেই দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব।
‘যে হারে, লাগামহীনভাবে বড় বড় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতি করছেন, আমরা কী করব? আমরা অসহায়। অনেক সরকারি কর্মকর্তা আছেন, তারাও অসহায়। কারণ, এখানে ৯০ শতাংশ লোকই ওই দিকে (দুর্নীতি)। ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লোক ভালো থেকে কী করবেন?’
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও ভোটে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মতো হলফনামা পদ্ধতির আওতায় আনার প্রস্তাব করেন হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরিতে ঢোকার সময় যদি হলফনামা দিতেন, তারপর পাঁচ বছর, ১০ বছর পর আবার হলফনামা দিতেন এবং সেগুলো নিয়ে যদি আলোচনা-সমালোচনা হতো, তাহলে দুর্নীতির চাবিটা বন্ধ হতো। তা না হলে বন্ধ হবে না।’
এমন আলোচনার মধ্যে গত ২ জুলাই সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা অনুসারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাববিবরণী দাখিল এবং তা প্রকাশ সংক্রান্ত বিধিমালা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তিন মাসের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
অমান্যকারীদের দিতে হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারি কর্মচারীরা সম্পদের হিসাব দেন না, এখানে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তার কারণ হচ্ছে, এজন্য তো কোনো দায়বদ্ধতা নেই, তারা জবাবদিহিতার মুখোমুখি হন না। তা-ই অবাক হওয়ার কিছু নেই।
‘যাদের দায়িত্ব জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার, তারা নিজেরাও হিসাব দেন না! ফলে তারা নিজেরাও লাভবান হন। কাজেই এটিকে এক ধরনের স্বাভাবিকতায় রূপান্তর করা হয়েছে। যে বিধিমালা সরকার নিজে প্রণয়ন করেছে, সরকার বা সরকারি কর্মচারীরা নিজেরাই তা লঙ্ঘন করছেন।’
তিনি বলেন, সম্পদের হিসাব দেওয়ার জন্য আদালত থেকে এর আগেও নির্দেশনা এসেছিল, এবার আবার নির্দেশনা এসেছে। এটি সরকারের জন্য বিব্রতকর। যারা সরকারি কর্মচারী, তাদের জন্যও বিব্রতকর। কিন্তু এ বিব্রতকর অবস্থা থেকে উত্তরণে তারা কোনো প্রতিকার ব্যবস্থা নেবে, সেটি আশা করাও কঠিন। কারণ, তারা নিশ্চয়ই বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ বা অর্থ অর্জন করে বলেই সম্পদের হিসাব দিতে চান না।
প্রতিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিধিমালা না মানা একটি অপরাধ। যে কোনো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অপরাধকারীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হয়। এটি ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। যারা অমান্য করবে, তাদের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যদি শাস্তির এ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়, তাহলে এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কিন্তু যে প্রেক্ষিত এটি তৈরি হয়েছে, প্রত্যাশা করা খুবই কঠিন।’
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, বিধানটি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত। শুধু সম্পদের হিসাব নিলেই চলবে না, হিসাব বিবরণী পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাহলে দুর্নীতিও অনেক কমে আসবে।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারি কর্মচারীরা নিজেদের স্বার্থেই সম্পদের হিসাব দিতে চান না। এটাও একটা দুর্নীতি। এই দুর্নীতির মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে দুর্নীতির আরও প্রসার ঘটছে।
কেনাকাটা ও সেবাদানসহ সরকারি নানা খাতে দুর্নীতি হচ্ছে উল্লেখ করে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এর মূল কারণ হলো সরকারি কর্মচারীদের সুযোগ করে দেওয়া। এক্ষেত্রে কোনোরকম জবাবদিহিতা নেই।
জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের কাছ থেকে নিয়মিত সম্পদের হিসাব নেওয়ার প্রক্রিয়াটি আরও কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা হালনাগাদ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কাজ চলছে, যাতে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল বাধ্যতামূলক ও বাস্তবায়নযোগ্য হয়।
এসএইচআর/কেএ
