বেড নেই, মেঝেই ভরসা; মশারি ছাড়া বাড়ছে ঝুঁকি

রাজধানীর মিরপুর থেকে ছেলেকে নিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এসেছেন রেশমা খাতুন। দুই দিন আগে ডেঙ্গু ধরা পড়ায় দ্রুত চিকিৎসার জন্য এসেছেন। কিন্তু হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে ছেলেকে মেঝেতেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। রোগীতে পূর্ণ হাসপাতালে ভ্যাপসা গরম আর অস্বস্তিকর পরিবেশ রোগীর ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
রেশমা বলেন, ‘ছেলেকে গত রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) এখানে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু শয্যা না থাকায় মেঝেতে একটি ম্যাট্রেস বিছিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে কোনো চাদরও দেওয়া হয়নি। যে বালিশ দিয়েছে, তাতে কাভার নেই। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও দেওয়া হয়নি মশারি। সবমিলিয়ে এই পরিবেশে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে যাবে।’
গতকাল সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডের বাইরে অনেক রোগী অবস্থান করছেন। এমনকি বারান্দার মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন কেউ কেউ। তাদের মধ্যে অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত। মশারি ছাড়া এসব রোগী ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই।

ওয়ার্ডের বাইরে অনেক রোগী অবস্থান করছেন। এমনকি বারান্দার মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন কেউ কেউ। তাদের মধ্যে অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত। মশারি ছাড়া এসব রোগী ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই
রোগী ও স্বজনদের দুর্দশা
ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে কেরানীগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন মো. জলিল। তিনি বলেন, ‘গতকাল এখানে ভর্তি হয়েছি। বেড না থাকায় মেঝেতে ব্যবস্থা করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বালিশ দিতে না পারায় বাসা থেকে বালিশ আনতে হয়েছে। তবে চিকিৎসা ঠিকঠাক হচ্ছে, ডাক্তাররা নিয়মিত এসে চেকআপ করে যাচ্ছেন।’
ছোট ভাই সাকিবুলকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন রাকিব। তিনি বলেন, ‘ভাইকে ভর্তি করিয়েছি, কিন্তু বেড না পাওয়ায় বারান্দার মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। কোনো ফ্যান নেই, মশারি নেই, গরমে কষ্ট হচ্ছে। আমরা তো হাসপাতালে আসি সুস্থ হওয়ার জন্য। কিন্তু এখানকার পরিবেশ অসুস্থতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।’
আরও পড়ুন
ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া ঢাবি শিক্ষার্থী সাকি বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে রোগীরা সবসময়ই ভোগান্তির শিকার হয়ে থাকেন। একটা ভালো পরিবেশ রোগীকে অনেকটা সুস্থ করে তোলে। অথচ এখানে চিকিৎসা নিতে এসে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে, ডেঙ্গু রোগী হিসেবে কোনো মশারিও পাইনি।’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ সেহাব উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের বেডের তুলনায় রোগীর চাপ বেশি। ফলে বাধ্য হয়ে কাউকে কাউকে মেঝেতে রাখতে হচ্ছে। ডেঙ্গু ছাড়াও অন্যান্য রোগীও রয়েছেন, সবাইকে সেবা দিতে হয়। আমরা রোগীদের জন্য নিয়মিত স্যালাইনের ব্যবস্থা রাখছি, চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি রাখা হচ্ছে না।’
হাসপাতালের আশপাশের নোংরা-আবর্জনা থেকে ডেঙ্গু হওয়ার শঙ্কা রয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন হাসপাতালে হাজার হাজার রোগী আসে, ফলে আবর্জনা তৈরি হয়। কিন্তু প্রতিদিনের ময়লা প্রতিদিনই পরিষ্কার করা হয়। ময়লা জমে ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
আরও পড়ুন
রোগীদের কেন মশারি দেওয়া হয় না— এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, ‘যার ডেঙ্গু হবে, তার মশারি থাকলেও হবে, না থাকলেও হবে।’

ডেঙ্গুর সর্বশেষ পরিসংখ্যান
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী (২২ সেপ্টেম্বর), চলতি বছর দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ১৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪২ হাজার ৫০৯ জন।
সংকটকালীন সময়ে রোগীরা ভালো পরিবেশে চিকিৎসাসেবা আশা করে থাকেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় সবাইকে বেড দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তবে চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি নেই।
ওএফএ/জেডএস