খালি হাতে গুলির সামনে দাঁড়ানো ডাক্তাররাই সত্যিকারের জুলাই যোদ্ধা

জুলাই বিপ্লবের সময় যারা খালি হাতে গুলির সামনে দাঁড়িয়েছেন, আহত-নিপীড়িতদের পাশে ছিলেন, চিকিৎসা দিয়েছেন- তারাই বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত যোদ্ধা বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল।
তিনি বলেন, আর সেই যোদ্ধাদের বড় অংশই চিকিৎসক। তাই এদের ইতিহাস লিখে রাখতে হবে- ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটে, নাম ধরে ধরে। অন্যদিকে, ফ্যাসিবাদের দোসর যেসব চিকিৎসক তখন সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের ভূমিকাও জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে।
সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগস্থ শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ) আয়োজিত এক চিকিৎসক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
আরও পড়ুন
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জুলাইয়ের সেই দিনগুলো কারও ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেই। ঢাকা মেডিকেলে আমাদের বোনেরা দিনভর অবরুদ্ধ ছিলেন। শিক্ষকরা পড়েছেন কঠিন পরিস্থিতিতে। ফ্যাসিবাদের দোসররা যখন তাণ্ডব চালিয়েছে, আমাদের ডাক্তার ভাই-বোনেরা তখন সাহসের সঙ্গে নিজেদের সেবা উজাড় করে দিয়েছেন।
বুলবুল জানান, ঢাকা সিটির দুই মহানগর এবং এনডিএফ মিলে আর্থিক কোরবানির যে বিশালত্ব রয়েছে, তা পরিমাণ দিয়ে বোঝানো যাবে না। আমরা নির্দেশনা দিয়েছিলাম- প্রয়োজনে টাকার কথা ভুলে যান, রোগীর চিকিৎসা যেন আটকে না থাকে। সেই নির্দেশনার ফলে ইসলামিক ব্যাংক সেন্ট্রাল হসপিটাল, ইবনে সিনা হাসপাতালসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ইবনে সিনা শুরুতে নজরদারির মধ্যে ছিল, সীমাবদ্ধতা ছিল। তারপরও আমরা তাদের বাধ্য করেছি চিকিৎসা দিতে। তারা সাধ্যমতো সাড়া দিয়েছে।
ফ্যাসিবাদবিরোধী ও দেশপ্রেমিক চিকিৎসকদের ভূমিকাকে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমার প্রস্তাব, আজ থেকেই সবাই তাদের অভিজ্ঞতা লিখে ফেলুন। ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটে এই ভূমিকার নথিভুক্তি জরুরি। কারণ এটাই হবে আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতার ইতিহাস।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল জুলাই বিপ্লবকে খাটো করে দেখতে চায়, কেউ ভুলিয়ে দিতে চায়। কিন্তু এটি বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন। আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। তাই এই বিপ্লব ও তার চেতনায় আইনগত ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ ক্ষমতায় এসে নিজেদের মতো করে এটিকে বদলে ফেলতে না পারে।
তিনি বলেন, জুলাই যোদ্ধা বলতে গেলে প্রথমেই আমাদের চিকিৎসকদের নাম আসবে। তারা শুধু সেবা দেয়নি, গুলির সামনে দাঁড়িয়েছে। খালি হাতে দাঁড়িয়েছে। যারা তাদের ইতিহাস লিখবে না, তারা ভবিষ্যতের ইতিহাসে জায়গা পাবে না।
এনডিএফের ভূমিকাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, তারা চিকিৎসক হিসেবে নয়, একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে লড়েছেন। তাদের সেই সম্মান প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে।
টিআই/এমএসএ