রাসুল (সা.) মানুষকে চরিত্র দিয়ে জয় করেছেন : ড. চৌধুরী মাহমুদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন ও ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সবচেয়ে বড় অলৌকিকতা ছিল তার চারিত্রিক সৌন্দর্য, মানবিকতা ও নৈতিক দৃঢ়তা, যা আজকের সমাজে সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিত। রাসূল (সা.) মানুষকে মুখের সৌন্দর্যে নয়, চরিত্রের সৌন্দর্যে জয় করেছেন।
আজ (মঙ্গলবার) ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সীরাতুন্নাবী (সা.) আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, রাসূল (সা.) ইউসুফ (আঃ)-এর মতো অপূর্ব সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলেন না, তবুও মানুষ তাকে ভালোবেসেছে তার আখলাক ও মানবিকতার জন্য। ‘‘তার আকর্ষণ ছিল চেহারায় নয়, চরিত্রে,” বলেন তিনি। “আজ আমরা স্টাইল ফলো করি অভিনেতাদের, অথচ রাসুল (সা.)-এর স্টাইল ছিল মানবিকতা—এই স্টাইল আমরা ভুলে গেছি।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, রাসূল (সা.)-এর শিক্ষা ছিল হেদায়েত ও নৈতিকতার পথে মানুষকে চালিত করা, অলৌকিক প্রদর্শন নয়। “তাকে পাঠানো হয়েছিল মানুষকে শেখানোর জন্য—কীভাবে বাঁচতে হয়, কীভাবে আচরণ করতে হয়।”
অধ্যাপক হাসান বলেন, “আমরা দাবি করি, নবীজিকে ভালোবাসি; অথচ তার বলা পথের উল্টো পথে চলি। পৃথিবীতে কেউ যদি কাউকে সত্যিকারের ভালোবাসে, সে তার অনুসরণ করে।”
তিনি তুলনা টানেন সাহাবাদের সঙ্গে—“তারা একবার শুনতেন, তারপর মানতেন। আর আমরা বারবার শুনি, কিন্তু বদলাই না। এই ‘শুনছি, মানছি না’—এই আত্মপ্রবঞ্চনাই আজকের সবচেয়ে বড় সংকট।”
অধ্যাপক হাসানের মতে, রাসূল (সা.)-এর প্রকৃত মিরাকল ছিল কোরআন। “মিরাকল মানে কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়—মিরাকল হলো কোরআন। এটি এমন একটি গ্রন্থ, যা কেয়ামত পর্যন্ত মানুষের হৃদয়কে পরিবর্তন করতে সক্ষম।”
তিনি বলেন, “এই কোরআনই হলো হেদায়েতের শেষ রূপ, আর নবীজিই সেই হেদায়েতের জীবন্ত রূপ—একজন ‘জীবন্ত কোরআন’।”
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, রাসুল (সা.)-এর আগমন ছিল মূলত মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য। “আমরা যতদিন কোরআনকে কেবল তাকের ওপর রাখব, ততদিন সমাজে পরিবর্তন আসবে না। কোরআনকে পড়া নয়—ধারণ করতে হবে,” বলেন তিনি।
অধ্যাপক হাসান সাহাবাদের উদাহরণ টেনে বলেন, তারা একেকজন ছিলেন সভ্যতার স্থপতি। “তারা রক্ত দিয়ে সভ্যতা গড়েছেন। ওহুদের যুদ্ধে দেহ ছিন্নভিন্ন হয়েছে, তবুও ‘আমরা শুনেছি এবং মান্য করেছি’—এই নীতিতে অটল থেকেছেন।” তিনি যোগ করেন, “আমরা এখন কোরআনের আলো শুনে অন্ধকারেই ফিরি—এই অবস্থার বদল জরুরি।”
বক্তৃতার শেষাংশে অধ্যাপক হাসান বলেন, “রাসুল (সা.)-কে এখন দেখা সম্ভব নয়, কিন্তু তার কোরআনকে আমরা দেখতে পারি, ছুঁতে পারি, বুঝতে পারি। সেই কোরআনই তার সত্যতার প্রমাণ, আর আমাদের মুক্তির একমাত্র পথ।”
চৌধুরী মাহমুদ হাসানের বক্তব্যে সীরাতুন্নাবী (সা.)-এর আলোচনা এক ভিন্ন দৃষ্টিকোণ পায়—যেখানে অলৌকিকতার চেয়ে মানবিকতা, নৈতিকতা ও কোরআনভিত্তিক জীবনই রাসূল (সা.)-এর সত্যিকারের উত্তরাধিকার হিসেবে প্রতিধ্বনিত হয়।
ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাজেদ আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও ধর্মীয় আলোচক অধ্যক্ষ মাওলানা মোশতাক ফয়েজী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইবনে সিনা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ ন ম আব্দুজ জাহের। এ ছাড়াও আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা রাসুল (সা.)-এর জীবনাদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজে ন্যায়, করুণা ও মানবিকতার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান।
টিআই/এনএফ