‘রেসিডেন্সি শিক্ষাকে নতুন মডেলে দাঁড় করানোর এখনই সময়’

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে হলে রেসিডেন্সি শিক্ষাকে নতুন মডেলে দাঁড় করাতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। তাঁর মতে, সময় এসেছে রেসিডেন্সি প্রোগ্রামকে এমনভাবে গড়ে তোলার, যাতে সেটি দেশের উপযোগী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির একটি আদর্শ মডেল হয়ে ওঠে।
শনিবার (২২ নভেম্বর) বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল শিক্ষার রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম উন্নয়নের লক্ষ্যে আয়োজিত ‘অ্যাডভান্সিং রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম অফ পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন ইন বাংলাদেশ: ব্রিজিং গ্যাপস, বিল্ডিং ফিউচার্স’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন বিএমইউর ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।
আলোচনায় অংশ নেওয়া বক্তারা দেশের পোস্টগ্রাজুয়েট চিকিৎসা শিক্ষার বর্তমান অবস্থা, গুণগত চ্যালেঞ্জ, প্রশিক্ষণ কাঠামো, পাঠ্যক্রম, ভর্তি পরীক্ষা, মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং মনিটরিং ব্যবস্থার দুর্বলতা বিশ্লেষণ করেন। লক্ষ্য ছিল- গ্যাপগুলো চিহ্নিত করা, সমাধান নির্ধারণ করা এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী রেসিডেন্সি কাঠামো প্রস্তাব করা।
এসময় অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নেতৃত্ব দিতে হবে। সে অনুযায়ী রেসিডেন্সি প্রোগ্রামকে এমন এক পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে, যেখানে এটি দেশের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশেষজ্ঞ তৈরির জন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি আরও বলেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল চিকিৎসা প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে রেসিডেন্সি শিক্ষাকে ঢেলে সাজানো ছাড়া বিকল্প নেই। নিরাপদ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করা এখন দেশের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। এজন্য রেসিডেন্সি প্রোগ্রামের গ্যাপগুলো খুঁজে বের করতে হবে, এবং সেই জায়গাগুলোতে শিক্ষকদের প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একাডেমিক ও ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষণ উন্নয়নে ইতোমধ্যে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। প্রশিক্ষক ও ফ্যাকাল্টি উন্নয়ন, ইভিডেন্স-বেইসড মেডিসিন চর্চা, অনলাইন সেবা এবং ডিজিটাল মনিটরিং কার্যক্রমকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। তিনি জানান, বিএমইউকে এআই-ভিত্তিক স্মার্ট হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ চলছে।
গোলটেবিল আলোচনায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন, বিএমইউর পরিচালক (আইটি) অধ্যাপক ডা. একেএম আখতারুজ্জামান, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. ইব্রাহীম সিদ্দিক, অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ, বিএমইএসি রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. হুমায়ুন কবির তালুকদার, বিএমইউ জার্নালের নির্বাহী সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এম মোস্তফা জামান এবং বিএমডিসি সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
এর আগে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ। সঞ্চালনায় ছিলেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ওমর ফারুক ইউসুফ, বিএমইউর প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, বিসিপিএস সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা, অনকোলজির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, অধ্যাপক ডা. খন্দকার মানজারে শামীম, শিশু কিডনি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোলাম মাঈনুদ্দিনসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় চেয়ারম্যানরা।
বিশেষজ্ঞরা পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল শিক্ষার কাঠামো, মনিটরিং-ইভালুয়েশন, গবেষণা দক্ষতা বৃদ্ধি, এবং আন্ডারগ্রাজুয়েট ও পোস্টগ্রাজুয়েট শিক্ষার সমন্বিত উন্নয়ন বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দেন।
টিআই/এমএসএ