প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরই খুলে দেওয়া হবে ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বুধবার (২৭ জানুয়ারি) থেকে দেশে প্রথমবারের মতো করোনা টিকার প্রয়োগ শুরু হচ্ছে। প্রথম ব্যক্তি হিসেবে টিকা নেবেন সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরুনিকা কস্তা। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরই সবার নিবেন্ধনের জন্য খুলে দেওয়া হবে ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে টিকা প্রয়োগ প্রস্তুতি দেখতে এসে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টায় কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক, পুলিশ ও সেনা সদস্যদের মধ্যে যারা টিকা পাবেন তাদের পাঁচজনের টিকা দেওয়া দেখবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে মোট ২৫ জনকে টিকা দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্ম খুলে দেওয়া হবে। যারা নিবন্ধন করতে পারবেন না, তারা টিকা কেন্দ্র বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়েও নিবন্ধন করতে পারবেন। সেই ব্যবস্থা আমরা রেখেছি।
বিভিন্ন মহলে টিকা নিয়ে অপপ্রচারের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টিকা কোনো রাজনীতির বিষয় নয়, মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্যই এই টিকা নিয়ে আসা। টিকা নিয়ে যারা বিরুপ প্রচার চালায় তারা কোনোভাবেই দেশের মঙ্গল চায় না। এ সময় টিকা বিষয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত না হয়ে টিকা গ্রহণের আহ্বান জানান জাহিদ মালেক।
মন্ত্রী বলেন, টিকা যেগুলো আগে আসছে সেগুলো আমাদের গোডাউনে সুন্দর ও নিরাপদে আছে। দুইদিন পরেই তো বাকি ৫০ লাখ ডোজ আসছে। এখন এ টিকা সারাদেশে আমরা দিয়ে দেব।
তিনি আরও বলেন, টিকা দেওয়ায় আমাদের পর্যাপ্ত সক্ষমতা রয়েছে। ৭০ লাখ টিকা আমরা একমাসেই দিতে পারব। কিন্তু এ টিকা দুই মাসে দিলেও কোনো সমস্যা হবে না। আমাদের ৪২ হাজার কর্মী, দেশের সব জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, ইনস্টিটিউটসহ জায়গাতেই ব্যবস্থা করে রেখেছি। কাজেই খুব তাড়াতাড়িই এ টিকা দেওয়া হয়ে যাবে।
৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকা দেয়া শুরু
করোনা প্রতিরোধে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে একযোগে টিকা প্রয়োগ শুরু হবে বলে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমরা কথা বলেছি। তিনিই আমাদের এই সময় দিয়েছেন।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতার পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক যান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে টিকাদান কর্মসূচির প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন তিনি।
ঢাকা মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) ১০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। ডাক্তার ২০ জন, নার্স ২০ জন, তৃতীয় ও চতুর্থ শেণীর সদস্য ও আনসার সদস্যসহ মোট ১০০ জনকে এ টিকা দেয়া হবে।
অক্সফোর্ডের ৫০ লাখ টিকা মানবদেহে ব্যবহারের উপযুক্ত
বেক্সিমকোর আনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন ল্যাব টেস্টে উত্তীর্ণ, মানবদেহে ব্যবহারের উপযুক্ত বলে জানিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, টিকার প্রতিটি লটের নমুনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। এ টিকা দিয়েই শুরু হবে করোনাভাইরাসের টিকাদান।
তিনি বলেন, এই ভ্যাকসিন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি। যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ সংস্থা এ টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে এবং সেদেশে এর প্রয়োগ করা হচ্ছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিটিউট বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী বিশ্বামানের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছে। ভারতের সেসব কাগজও পরীক্ষা করা হয়েছে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত এ টিকা সোমবার (২৫ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ৫৬ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে করে দেশে আসে। বিমানবন্দর থেকে এই টিকা টঙ্গীতে বেক্সিমকোর গুদামে নেওয়া হয়।
গত ২১ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় উপহার হিসেবে ভারত সরকারের পাঠানো ২০ লাখ ডোজ টিকা। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ ফ্লাইটে করে আসে। সেসময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক টুইটে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ দেয় ভারত, ‘ভ্যাকসিনমৈত্রী’ তারই নজির।
টিআই/ওএফ