চলছে বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার আতঙ্কে রাতভর পাহারা

সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ এবং অং সান সু চির মুক্তির দাবিতে টানা নবম দিনের মতো বিক্ষোভে নেমেছেন মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ। রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দেশটির বড় শহরগুলোর রাস্তায় লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ-প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন। এদিকে গ্রেপ্তার আতঙ্কের কারণে শনিবার রাতে না ঘুমিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষ দলবদ্ধভাবে এলাকা পাহারা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী ও সাবেক স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির মুক্তির দাবিতে মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত মিছিল করেছে দেশটির প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিক্ষোভে সমর্থনের অংশ হিসেবে অনেকগুলো হাইওয়ে বাস হর্ন বাজাতে বাজাতে শহর প্রদক্ষিণ করে।
রয়টার্স জানিয়েছে, টানা বিক্ষোভের নবম দিনে রোববার মোটরবাইক ও প্রাইভেটকারের একটি বড় বহর রাজধানী নেইপিদো প্রদক্ষিণ করেছে। এছাড়া দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলীয় দায়েই শহরে ড্রাম বাজিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন একদল মানুষ। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন প্রদেশের ইরাবতী নদীর তীরে অবস্থিত ওয়াইমাও শহরে পতাকা হাতে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন মানুষ। বিক্ষোভে অভ্যুত্থানবিরোধী স্লোগানের পাশাপাশি বিপ্লবী বিভিন্ন গানও গাচ্ছেন তারা। এছাড়া দেশজুড়ে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া প্রায় সকল মানুষের হাতেই অং সান সু চির ছবি রয়েছে।
নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে চলতি মাসের শুরুতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপর স্টেট কাউন্সিলার অং সান সু চি’র সরকারকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, অং সান সু চিসহ আটক করা হয় অনেক শীর্ষ নেতাকে। এর দু’দিন পর সু চিকে দুই সপ্তাহের জন্য হেফাজতে নেয় পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আমদানি-রপ্তানি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়।

সেসময় দেশটির পুলিশ দাবি করে, রাজধানী নেইপিদোতে সু চির বাসভবনে সামরিক কর্মকর্তাদের তল্লাশি অভিযানের সময় ওয়াকি-টকি পাওয়া যায়। যা দেশটির আইনের লঙ্ঘন করে আমদানি করা হয়েছে এবং অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
সু চির সেই দুই সপ্তাহের আটকাদেশ সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এরপর কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সু চির আইনজীবী খিন মাউং জাউয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি রয়টার্স।
রাজনৈতিক বন্দীবিষয়ক পর্যবেক্ষণকারী গ্রুপ অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস জানিয়েছে, সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৮৪ জনের বেশি মানুষকে আটক করেছে পুলিশ ও সেনবাহিনীর সদস্যরা। এর মধ্যে বেশিরভাগকেই রাতে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়।
ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার গ্রুপ বার্মা ক্যাম্পেইন ইউকে’র কর্মী ওয়াই নিন উইন্ট থন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে সময়ে এই সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানাচ্ছে, ঠিক সেই সময়েই দেশজুড়ে ভীতি ও অস্থিতিশীলতা বাড়াতে সবকিছুই করছেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিং অং হ্লেইং।

এদিকে ‘রাতে অপহরণ বন্ধ করুন’ লেখা প্লাকার্ড ও পোস্টার হাতে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দারা। এসময় প্রতি রাতে বাড়ি থেকে বিক্ষোভকারীদের উঠিয়ে নেওয়া বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
রয়টার্স জানিয়েছে, গ্রেপ্তার আতঙ্কের কারণে শনিবার রাতে ইয়াঙ্গুন ও মান্দালাই শহরের বাসিন্দরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তাদের এলাকা পাহারা দেন। সামরিক জান্তা সরকার ২০ হাজারের অধিক আসামিকে কারাগার থেকে মুক্তির ঘোষণা দেওয়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিক্ষোভকারীরা।
সূত্র: রয়টার্স
টিএম