সু চির রিমান্ড বাড়ল দু’দিন

সামরিক অভ্যুত্থানে আটক মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি আগামী বুধবার পর্যন্ত রিমান্ডে থাকবেন। এর আগে, সোমবার পর্যন্ত তিনি রিমান্ডে থাকবেন বলে জানানো হলেও তার আইনজীবী নতুন এই তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, সামরিক জান্তা শাসনের অবসানের লক্ষ্যে টানা দুই সপ্তাহ ধরে দেশটিতে বিক্ষোভ করছেন লাখ লাখ মানুষ। সোমবার দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনসহ আরও বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমেছেন বলে খবর দিয়েছে বিবিসি। তবে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাঁজোয়া যান নিয়ে ইয়াঙ্গুন ও রাজধানী নেইপিদোতে টহল দিতে দেখা গেছে।
অভ্যুত্থানবিরোধী দমনে দেশটির সামরিক এই বাহিনী কঠোর হতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিক্ষোভকারীদের সমাগম ঠেকাতে ও অনলাইন যোগাযোগ বন্ধে রাজধানীতে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং আটক ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির নেত্রী অং সান সু চিসহ অন্যান্যদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন।
মিয়ানমারের এই নেত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ছয়টি ওয়াকিটকি আমদানি এবং আইন লঙ্ঘন করে ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে সামরিক বাহিনী।
এই অভিযোগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশি জিম্মায় নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সোমবার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সু চির আইনজীবী খিন মং জ্য বলেছেন, তিনি আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রিমান্ডে থাকবেন। তার এই রিমান্ডের সময় বৃদ্ধি ন্যায়সঙ্গত কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি আপনি বিবেচনা করুন।
সু চির আইনজীবী দলের একজন সদস্য বলেছেন, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি সু চির সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনজীবী নিয়োগ দেবেন কিনা জানতে চেয়েছিলেন।
গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি এবং এনএলডির ৪০০ জনের বেশি জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীকে আটক করে দেশটির সামরিক বাহিনী। সামরিক জান্তা সরকারের বিরোধিতায় মিয়ানমারের লাখ লাখ মানুষ টানা দুই সপ্তাহ ধরে দেশজুড়ে বিক্ষোভ করছেন। ২০০৭ সালের জাফরান বিপ্লবের পর এত বড় বিক্ষোভ এর আগে মিয়ানমারে দেখা যায়নি- বলছে রয়টার্স।
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে সেনাবাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে দেশটির রাজধানী নেইপিদো, বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ বিভিন্ন শহরে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হলেও পরে তা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভকারীরা গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন।
দেশটির সেনাবাহিনী বিক্ষোভ দমনে বড় শহরগুলোতে জনসমাগম নিষিদ্ধ এবং কিছু কিছু শহরে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছে। তবে সরকারের কঠোর বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে দেশটির বেশ কিছু শহরে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের তীব্র নিন্দা জানিয়ে গণতন্ত্রের যাত্রা অব্যাহত রাখতে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সামরিক অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া মিয়ানমারের বেশ কয়েকজন জেনারেলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যান্য অনেক দেশও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে। তবে জাপান এবং এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই অঞ্চলে কৌশলগত গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করার আহ্বান জানিয়েছে।
অভ্যুত্থানের নেপথ্যে
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার কারণ হিসেবে গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে জালিয়াতির কথা বলেছেন দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইং। তিনি বলেছেন, দেশের জাতীয় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে রাজনৈতিক দলগুলো সেনাবাহিনীর সহায়তা চায়; যে কারণে জাতীয় রাজনীতিতে সেনাবাহিনী ভূমিকা রাখতে ব্যবস্থা নিয়েছে— গত সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন মিন অং হ্লেইং।
তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগের পর সেনাবাহিনী তদন্তে নির্বাচনে এক কোটি ৪৮ লাখ ২ হাজার ১১৬টি জাল ভোটের সন্ধান পায়। এই ভোট জালিয়াতি দেশের বিভিন্ন শহর, অঞ্চল এবং রাজ্যগুলোতে পাওয়া গেছে।
সামরিক পোশাকে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে জেনারেল হ্লেইং নতুন নির্বাচন আয়োজন এবং বিজয়ীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, ‘সংস্কারের’ মাধ্যমে পরিবর্তিত একটি কমিশন নতুন নির্বাচন আয়োজন করবে।
মিন অং হ্লেইং বলেন, পূর্বের ৪৯ বছরের সামরিক শাসনের তুলনায় তার শাসন হবে ‘আলাদা’। তার শাসনের মাধ্যমে মিয়ানমার ‘সত্যিকারের এবং সুশৃঙ্খল গণতন্ত্র’ অর্জন করতে পারবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এসএস