এবার মিয়ানমারে রেলপথ অবরোধ

সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ এবং সাবেক স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করছে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ। টানা আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রেলপথ অবরোধ করেছে বিক্ষোভকারীরা।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় মাওলামাইন শহরে যাওয়ার রেলপথ অবরোধ করে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ। গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করা মানুষের সঙ্গে কঠোর আচরণ করা হলে ‘গুরুতর পরিণতি’ ভোগ করতে হতে পারে বলে দেশটির সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ সতর্ক করার পর রেলপথ অবরোধের এই ঘটনা ঘটল।
চলতি মাসের প্রথম দিনে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) সরকারকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধমে ক্ষমতাচ্যুত করে মিয়ানমারের প্রভাবশালী সেনাবাহিনী। আটক করা হয় প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, অং সান সু চিসহ অনেক শীর্ষ নেতাকে। এরপরই অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে নামে দেশটির সাধারণ মানুষ। তবে বিক্ষোভ দমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা জান্তা সরকার।
রাজধানী নেইপিদো, বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনসহ দেশটির বড় শহরগুলোতে সামরিক যান ও সেনা সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি গত দুই ধরে রাত্রিকালীন ৮-১০ ঘণ্টা ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার হচ্ছে। এরপরও বিক্ষোভে নেমেছেন মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ। এছাড়া চিকিৎসক, শিক্ষক ও ব্যাংকারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিক্ষোভের অংশ হিসেবে ধর্মঘটে নেমেছেন। এর ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সরকারি বিভিন্ন কাজ-কর্মও।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবির বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা মঙ্গলবার সকালে ইয়াঙ্গুন থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মাওলামাইনে যাওয়ার রেলপথ অবরোধ করে রেখেছেন। এসময় দেশটির জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে চলমান অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে বিভিন্ন প্লাকার্ড ধরে ছিলেন তারা। পাশাপাশি ‘আমাদের নেতাদের এখনই মুক্তি দাও’ এবং ‘জনগণের ক্ষমতা, জনগণের হাতেই ফিরিয়ে দাও’- প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
এদিকে রেললাইন অবরোধের পাশাপাশি মঙ্গলবার সকালে ইয়াঙ্গুনের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। এসময় বিক্ষোভে যোগ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাপ প্রয়োগ করেন তারা। এছাড়া প্রায় ৩০ জন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বিক্ষোভে অংশ নেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ধর্মীয় প্রার্থনাও করেন তারা।

এর আগে মিয়ানমারে টানা দ্বিতীয় রাতের মতো ইন্টারনেট বন্ধ রাখে দেশটির জান্তা সরকার। মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় রাত একটা থেকে দেশটিতে ইন্টারনেট সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ব্রিটেনভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘নেটব্লকস’ও। সংস্থাটি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত একটা থেকে মিয়ানমারজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ ছিল। গত এক ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর মানুষের ক্ষোভ দমাতে এনিয়ে চতুর্থবারের মতো ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে সামরিক জান্তা সরকার। রাস্তায় টানা বিক্ষোভের পাশাপাশি অনলাইনেও অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ইন্টারনেট সংযোগ বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এর আগে সোমবারও মিয়ানমারজুড়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট বন্ধ এবং সেনা মোতায়েন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার করায় দেশটির জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এই বিক্ষোভ থামাতে সামরিক জান্তা ধীরে ধীরে নিপীড়নমূলক অভিযান জোরদার করছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ট্যাংক ও সেনা মোতায়েনের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সামরিক জান্তা দেশটিতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। এমনকি মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় কাচিন প্রদেশে বিক্ষোভকারীদের ওপর সেনাবাহিনী গুলি চালিয়েছে বলেও খবর বেরিয়েছে।
সোমবার কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন জানায়, (রোববার রাতে) আট ঘণ্টার জন্য সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারা আরও জানিয়েছে, রাতের বেলা ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও দিনের শুরুতে অফিস-আদালতের কাজ-কর্ম শুরু হলে ইন্টারনেট সেবা পুনর্বহাল করা হয়।
সূত্র: রয়টার্স
টিএম