ব্রিটেনে করোনায় আক্রান্ত নারীর লাইফসাপোর্ট খুলে নেওয়ার আদেশ

ব্রিটেনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ‘কোমায়’ থাকা এক নারীর লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন দেশটির এক আদালত। যে হাসপাতালে ওই নারী চিকিৎসাধীন রয়েছেন, সেখানকার কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সময় বুধবার আদালত এই আদেশ দেন।
ইসলাম ধর্মাবলম্বী ওই নারীর আত্মীয়রা অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদনের বিরুদ্ধে আপিল করে বলেছিলেন, ‘একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জীবন-মৃত্যু নির্ধারণ করতে পারেন’; কিন্তু বুধবারের আদেশে আদালত তাদের সেই আপিল খারিজ করে দিয়ে বলেন, ‘সাক্ষ্য-প্রমাণ বলছে, তার বাঁচার কোনও আশা নেই। এখন তাকে লাইফ সাাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখলে তিনি সুস্থ হবেন না, বরং তার মৃত্যুযন্ত্রণা দীর্ঘায়িত হবে।’
গত মাসে ব্রিটেনের লেসিস্টার বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে করোনায় গুরুতর আক্রান্ত অবস্থায় ভর্তি হওয়া ওই নারী ৯ মাসের সন্তানসম্ভবা ছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে একটি পুত্রসন্তান জন্ম দেন তিনি, তারপর তার জীবন সংশয় দেখা দেয়। তখন থেকেই তিনি লাইফ সাপোর্টে আছেন। তিন বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে তার।
আদালতে ৩০ বছর বয়স্ক ওই নারীর চিকিৎসকরা বলেন, তার প্যানক্রিয়াস(অগ্ন্যাশয়) কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে, একটি ফুসফুস সম্পূর্ণ অচল এবং তিনি একটি দূরারোগ্য রোগে ভুগছেন, যার প্রভাবে তার দেহের অভ্যন্তরের গ্রন্থিগুলো প্রয়োজনীয় হরমোন তৈরি করতে পারছে না।
হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘তাকে সুস্থ করে তুলতে আমরা কোনও দিক থেকে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখিনি। কিন্তু গত একমাস ধরে তার শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে, এবং বর্তমানে তিনি যে অবস্থায় রয়েছেন, সেখান থেকে তার কখনও ফিরে আসা সম্ভব নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞান এমনটাই বলছে।’
এ সময় আদালতে উপস্থিত ওই নারীর বোন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদনের বিরুদ্ধে আপিল করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমরা সৃষ্টিকর্তার অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস করি। আমরা বিশ্বাস করি, একজন মানুষের মৃত্যু তখনই হবে, যখন সৃষ্টিকর্তা তার মৃত্যুর আদেশ দেবেন। এ কারণে আমি বলতে চাই, আমার বোনের লাইফ সাপোর্ট যদি খুলে নেওয়া হয়—সেটি হবে তাকে হত্যা করার শামিল।’
শুনানিতে উভয়পক্ষের বক্তব্য শেষে ওই নারীর বোনকে বিচারক বলেন, ‘আপনারা অলৌকিক ঘটনার প্রত্যাশা করছেন, কিন্তু সত্য হচ্ছে— ইতোমধ্যে আপনার বোন যেসব শারীরিক কষ্ট ও যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গেছে, তা এক কথায় বর্ণনাতীত…ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তথ্য-প্রমাণ দেখে আদালতের কাছে এটি স্পষ্ট যে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আপনার বোনকে কেড়ে নিয়েছে।’
‘গত এক মাস ধরে তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন এবং তাকে এই অবস্থায় ফেলে রাখার অর্থ হচ্ছে তার মৃত্যুযন্ত্রণাকে দীর্ঘায়িত করা। এ কারণে আদালত তার লাইফসাপোর্ট খুলে নেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে।’
আদেশে আদালত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলেন, ওই নারীর নাম যেন বাইরে প্রকাশ না করা হয়; কারণ সেক্ষেত্রে তার পরিবারের সদস্যদের হয়রানীর মধ্যে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে ওই নারীর লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া এবং এটি করার আগে তার আত্মীয়দের ওই নারীকে দেখার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয় আদেশে।
সূত্র: বিবিসি
এসএমডব্লিউ