৭৫ বছরে যেভাবে পঙ্গু হয়েছে পাকিস্তানের রাজনীতি

Tareq Mahmud

২২ আগস্ট ২০২২, ০২:১৫ পিএম


৭৫ বছরে যেভাবে পঙ্গু হয়েছে পাকিস্তানের রাজনীতি

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুতে প্রথম দিকেই পাকিস্তানের রাজনৈতিক যাত্রা গুরুতর ধাক্কার সম্মুখীন হয় (ফাইল ছবি)

পঁচাত্তর বছর আগে উপমহাদেশের মুসলমানদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পাকিস্তান। নিরন্তর রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি আদায় করেছিলেন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।

তিনি হয়তো পাকিস্তানকে এমন একটি সাংবিধানিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন যেখানে জাতি, ধর্ম বা ধর্মের ভিত্তিতে কেউ বৈষম্য করবে না। তবে প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরে বিভিন্ন সময়ে অনেকবারই রাজনৈতিক পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি।

ধারণা করা হয়, হিন্দু আধিপত্যের ভয় এবং অভিজাতদের হাতে সাধারণ জনগণের নিপীড়নের আশঙ্কাই ছিল পাকিস্তান সৃষ্টির পেছনে অন্যতম কারণ। আইনজীবী, শিক্ষক, ছাত্র, ক্ষুদ্র জমির মালিক ও কৃষকরা স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ছিল শ্রমিক শ্রেণীর জনগণের সম্মিলিত চেতনার একটি কাজ যারা নিজেদের মৌলিক অধিকারকে সমুন্নত রাখতে স্বাধীন রাষ্ট্র চেয়েছিলেন। এছাড়া সম্মানজনক জীবিকা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা দিতে পারে এমন একটি দেশ চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু এই স্বপ্ন কি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়েছে?

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সফল হলেও প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুতে প্রথম দিকেই পাকিস্তানের রাজনৈতিক যাত্রা গুরুতর ধাক্কার সম্মুখীন হয়। তবে সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই ১৯৫১ সালের অক্টোবরে আরেকটি বিপর্যয়ের মুখে পড়ে পাকিস্তান।

সেসময় পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্য দিবালোকে রাওয়ালপিন্ডিতে হত্যা করা হয়। লিয়াকত আলী খানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কার্যত পাকিস্তানের গণতন্ত্রের পতন শুরু হয়। আর সেই ধারা দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে আজও অব্যাহত আছে।

লিয়াকত আলী খানের মৃত্যুর পর একপর্যায়ে গভর্নর জেনারেলের আদেশের মাধ্যমে খাজা নাজিমুদ্দিনের মন্ত্রিসভাকে অপসারণ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক সরকার কখনোই দেশটিতে অগ্রাধিকার ছিল না।

এমনকি মোহাম্মদ আলী বগুড়া আপ্রাণ চেষ্টা করেও তার পূর্বসূরির মতো বেসামরিক-সামরিক আমলাতন্ত্রের যোগসাজশে ব্যর্থ হন। মোহাম্মদ আলীর পর চৌধুরী মুহম্মদ আলী, ইব্রাহিম ইসমাইল চুন্দ্রিগার, ফিরোজ খান নুনও নিজেদের দাবার গুটি হিসেবেই প্রমাণ করেন।

এরপর ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি করা হয়। এটি পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষের হাতে দেশের সম্পদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ তুলে দেয়। আইয়ুব খান এবং পরবর্তীতে তার উত্তরসূরি ইয়াহিয়া খান তাদের ব্যক্তিগত সম্পদের মতোই পাকিস্তানকে শাসন করেন।

আইয়ুবের শাসন এবং ইয়াহিয়ার পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতি পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে পঙ্গু করে দিয়েছিল। সেসময়ই পাকিস্তানের পূর্বের গণতান্ত্রিক সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে মেনে নিতে অস্বীকার করে পশ্চিম পাকিস্তানের অভিজাতরা। আর এরপরই অধিকার আদায় ও বঞ্চনা-শোষণ থেকে মুক্তি পেতে দেশের পশ্চিম অংশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে পূর্ব পাকিস্তান।

রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলায় মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। দীর্ঘ ৯ মাসের বীরত্বগাথা যুদ্ধের পর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। ভেঙে যায় পাকিস্তান।

এরপর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া জুলফিকার আলী ভুট্টো দেশ পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা শুরু করেন। তিনি দেশটিকে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান দিয়েছেন। তার করা ভূমি সংস্কারকে কৃষকরা স্বাগত জানিয়েছিলেন। তিনি একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি স্থাপন করেন এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

তবে বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে জাতীয়তাবাদী দলগুলোর সঙ্গে জুলফিকার আলী ভুট্টোর আচরণ ছিল শোচনীয়। তার সরকার মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে খারাপ নজির স্থাপন করে এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করে দেয়। আর এর ফলে ভুট্টো বিরোধী আন্দোলনের একপর্যায়ে আরেকটি সামরিক আইন জারি হয় পাকিস্তানে।

ক্ষমতা গ্রহণের পর জিয়া উল হকের সামরিক আইন পাকিস্তানে সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে। তিনি সংবিধান বাতিল করেন এবং রাজনীতিবিদ, অধিকারকর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের সদস্য এবং সাধারণ নাগরিকদেরও কারারুদ্ধ করেন।

জিয়া প্রায় এগারো বছর ধরে পাকিস্তানে শাসন করেছিলেন। এসময় নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রয়োগ করে, সংবিধানের প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়ে এবং গণতন্ত্রের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে পাকিস্তানকে শাসন করেন তিনি। আর এই ধরনের শাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে পাকিস্তানে সৃষ্টি হয় ধর্মীয় উগ্রবাদ, সমাজের নানামুখী মেরুকরণ, মাদক এবং কালাশনিকভ সংস্কৃতি।

এরপর ১৯৮৮ সালে মুসলিম বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেনজির ভুট্টো নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে পাকিস্তানে গণতন্ত্র ফিরে আসে। কিন্তু এই নারী প্রধানমন্ত্রী, তার মন্ত্রিসভা এবং পার্লামেন্ট ছিল খুবই দুর্বল, কারণ পাকিস্তানের সেসময়ের প্রেসিডেন্ট নিজের ক্ষমতা প্রয়োগে কার্যত স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিলেন।

মূলত প্রেসিডেন্টের সাথে মতবিরোধের কারণেই প্রথমে বেনজির ভুট্টো এবং পরে নওয়াজ শরীফ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। প্রায় এক দশক ধরে এই দুই নেতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীত্ব আবর্তিত হতে থাকে। আর এই যুগের অবসান ঘটে আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। আর সেটি হয়েছিল জেনারেল পারভেজ মোশাররফের হাত ধরে।

মোশাররফ একটি আলোকিত এবং প্রগতিশীল পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশ শাসন শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার শেষ হয়েছিল অন্যান্য সামরিক শাসকদের মতোই। তিনি পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন; যার জন্য দেশটি প্রায় ১২ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

এছাড়া সেসময় পাকিস্তানে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। পারভেজ মোশাররফের বেলুচিস্তান অভিযান প্রদেশটিতে গভীর বিভাজন তৈরি করে। তবে নিজের শাসনের শেষ বছরগুলোতে মোশাররফ ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন। ফলে পাকিস্তানে তিনি সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ও নওয়াজ শরিফকে ফিরে আসার অনুমতি দেন।

এরপর ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক সরকারগুলো মারাত্মক সন্ত্রাসবাদ, জাতিগত সহিংসতা এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাতের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ২০১৩ সালে আবারও দেশটিতে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটে। সেসময় নওয়াজ শরিফের নতুন সরকার ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ধারাবাহিক বিরোধিতার সম্মুখীন হয়।

এছাড়া পিএমএল-এন সরকারের শাসন এবং বৈধতাকে দুর্বল ও চ্যালেঞ্জ করার জন্য তেহরিক-ই-লাব্বাইক এবং পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিকের (পিএটি) মতো গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দুর্নীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণা করেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।

এরপর ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে ইমরান খানের পিটিআই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তবে ইমরানের দলের এই জয়ের পেছনে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর হাত ছিল বলে অভিযোগ করেন বিরোধীরা। আবার তাদের (সামরিক বাহিনী) ইন্ধনেই জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ইমরান খানের সরকারের পতন ঘটে।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক পঙ্গুত্বের এই জঘন্য কাহিনীর বহু ভিন্ন দিক বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর ব্যাপক সম্পৃক্ততা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পঙ্গু করে দিয়েছে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কারচুপি এবং প্রকৃত রাজনৈতিক কণ্ঠের দমন রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি করেছে।

রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এতোটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে সেখানে সহজেই কারসাজি করা যায়। এটি দেশের পুরো ব্যবস্থাপনায় উদাসীনতা এবং অবিশ্বাস সৃষ্টি করে। যাদের ক্ষমতা ও যোগাযোগ আছে তারা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই ক্ষমতায় আরোহণের পথ পেয়ে যান।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক পক্ষাঘাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তর্দ্বন্দ্ব। এটি পিপিপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে লড়াই দিয়ে শুরু হয়েছিল এবং এর বর্তমান বহিঃপ্রকাশ পিএমএল-এন এবং পিটিআইর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেখা যায়।

আরেকটি বিষয় যা রাজনৈতিক দলগুলোকে দুর্বল করে তোলে তা হলো- দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অনুপস্থিতি। নিয়মিত আন্তঃদলীয় নির্বাচন হয় না এবং বেশিরভাগ দল ব্যক্তিগত বা পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের মতো কাজ করে।

উন্নত দেশগুলোর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে পাকিস্তানে রাজনৈতিক দলগুলো প্রকৃত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারেনি এবং পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবেই রয়ে গেছে। বংশীয় রাজনীতি গণতন্ত্র ও সাংবিধানিকতার চেতনাকে হত্যা করেছে।

এই কারণেই যখন কোনো স্বৈরশাসক রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন বা আঘাত হানে তখন জনগণ সেটির প্রতিরোধ করে না। তারা নিজেকে প্রান্তিক বলে মনে করে এবং নেতাদের বিপদে রক্ষা করার জন্য রাস্তায় নামতে প্রস্তুত থাকে না।

পাকিস্তানের পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে পরাজিত হয়ে কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ইমরান খান। মূলত নিজ দলের প্রায় দুই ডজন সংসদ সদস্যের দলত্যাগের পর ইমরানের সরকারের পতন ত্বরান্বিত হয়।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানজুড়ে বড় বড় শহরগুলোর পাশাপাশি মফস্বল এলাকাতেও একের পর এক সমাবেশ করে চলেছেন সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার। এসব সমাবেশে পিটিআই নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো এবং সেখানে তিনি বরাবরই আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন।

ইমরান খানকে অপসারণের পর পাকিস্তানের শহরাঞ্চলে বড় ধরনের প্রতিবাদ বিক্ষোভও শুরু হয়। পিটিআই এই জনপ্রিয়তাকে একটি টেকসই রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তর করতে পারে কিনা তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না।

ধর্ম-রাজনীতির মিশ্রণে সৃষ্ট যেকোনো গণতন্ত্র, সংবিধান ও সংসদের ধারণা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর মূলধারায় আসা পাকিস্তানের জনসাধারণকে বিভক্ত করেছে এবং গণতন্ত্রের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানের মতো দলের সাম্প্রতিক উত্থান এবং তাদের তৃণমূল সমর্থন দেশটির মূলধারার রাজনৈতিক দল, নীতিনির্ধারক এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তা।

পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার এই অবক্ষয়ের অনেক প্রভাব রয়েছে। রাজনীতি ও অর্থনীতি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পূর্ববর্তী যেকোনো ঘটনা পরবর্তী ঘটনাকে প্রভাবিত করে এবং এটি তদ্বিপরীতভাবেও সত্য। বহু বছর ধরে চলে আসা পাকিস্তানের এই রাজনৈতিক অস্থিরতা সমাজে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধা দিয়েছে।

এছাড়া পাকিস্তান আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতারও সম্মুখীন হয়েছে। ভুল সময়ে ভুল দেশে ইমরান খানের উপস্থিতি ভুল ধারণা দিচ্ছে। এর ওপর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণের পর এর পেছনে ‘বিদেশি হাত’ রয়েছে বলে ইমরান খানের দেওয়া বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রকে (পাকিস্তান থেকে) বিচ্ছিন্ন করেছে। এছাড়া আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান গোষ্ঠীকে নিঃশর্তভাবে সমর্থন পাকিস্তানের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ নীতি হতে পারে।

তবে এই সকল সমস্যা সমাধানের জন্য পাকিস্তানে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ প্রয়োজন। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উন্মুক্ত করে এটি অর্জন করা যেতে পারে। একইসঙ্গে পাকিস্তান এগিয়ে যেতে চাইলে দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অপরিহার্য।

প্রধানমন্ত্রীকে পার্লামেন্টের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। বিচার বিভাগের উচিত সংবিধান মেরামত বা সংস্কার না করে ন্যায়বিচার প্রদান এবং ব্যাখ্যা করা। আইন প্রণয়নের দায়িত্ব পার্লামেন্টের। নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীদের ফাঁসির মঞ্চে বা কারাগারে পাঠানো কেবলমাত্র রাজনৈতিক পঙ্গুত্ব এবং সামরিক বাহিনীর বদনাম নিয়ে আসবে।

জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার মাধ্যমে অর্থনীতি রক্ষা করা সম্ভব। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক সম্প্রীতি প্রয়োজন এবং এটি পাকিস্তানের ৭৫ বছরের ইতিহাসে নিদারুণভাবে অনুপস্থিত।

দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল অবলম্বনে

টিএম

Link copied