কত লাশ দরকার? প্রশ্ন মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীদের

পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার একদিন আগে মিয়ানমারে গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকারীদের ওপর সামরিক বাহিনীর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন দেশটির নাগরিক নিয়ে নিয়ে অং টেট নাইং। হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সেই পোস্টে জাতিসংঘকে উল্লেখ করে তিনি লিখেছিলেন, ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জাতিসংঘের কত লাশ দরকার?
গত ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন রোববার মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে পুলিশের গুলিতে প্রথমে যারা মারা গেছেন; নিয়ে নিয়ে অং টেট নাইং তাদের একজন।
বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে মিয়ানমার পুলিশের গুলিতে ১৮ জনের প্রাণহানি দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন, মান্দালয় এবং দাওয়েইয়ে ঘটেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা দেশটিতে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। বিক্ষোভ থেকে সাংবাদিকসহ ৮ শতাধিক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর দিয়েছে বিবিসি।
দেশটির একজন রাজনীতিক এবং একজন চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, দেশজুড়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর টানা দ্বিতীয় দিনের মতো পুলিশের ব্যাপক দমন-পীড়নে অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েক ডজন।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মিয়ানমারের দৈনিক গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার বলছে, সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ সংযম দেখালেও জনগণের অরাজকতা উপেক্ষা করতে পারে না। দাঙ্গাবাজ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে অনিবার্যভাবেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় মানবাধিকার এবং স্বাস্থ্য কর্মীরা বলেছেন, রোববার সকালের দিকে ইয়াঙ্গুনে শিক্ষকদের বিক্ষোভে স্টান গ্রেনেড, টিয়ার গ্যাস এবং গুলি ছুড়েছে পুলিশ। এতে অন্তত চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে।
পুলিশি সহিংসতা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। নায়ান উইন শিন নামের এক বিক্ষোভকারী রয়টার্সকে বলেন, তারা যদি আমাদের দমানোর চেষ্টা করে, তাহলে আমরা আরও জেগে উঠবো। আমাদের ওপর হামলা হলে তা প্রতিরোধ করবো। আমরা সেনাবাহিনীর বুটের কাছে নত হবো না।
দেশটির বিভিন্ন শহরে কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছেন। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দাওয়েই শহরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ তাজা গুলি, টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছে। সেখানে পুলিশের হামলায় অন্তত চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে বিক্ষোভকারীরা বিবিসিকে জানিয়েছেন।
স্থানীয় রাজনীতিক কিয়াও মিন টিকে রয়টার্সকে বলেছেন, মায়েক, বাগো এবং পোকোকু শহরেও প্রাণহানির খবর এসেছে।
মান্দালয়েও ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়েছে মিয়ানমার পুলিশ। শহরটিতে বিক্ষোভকারীদের তাড়িয়ে দিতে জলকামান এবং ফাঁকা গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এতে একজনের প্রাণ গেছে।
থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের নির্বাসিত নাগরিকদের পরিচালিত অনলাইন সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতি বলছে, দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যাপক চড়াও হয়েছে পুলিশ। পুলিশের তাণ্ডবে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহতও হয়েছেন।
গত ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জালিয়াতির মাধ্যমে এনএলডি জয়ী হয়েছে বলে অভিযোগ করে অভ্যুত্থানের পক্ষে সাফাই গাইছে জান্তা সরকার। প্রায় ৫০ বছরের সেনাশাসনের পর দেশটিতে গণতন্ত্রের যাত্রার কয়েক বছর যেতে না যেতেই আবারও সামরিক জান্তা ক্ষমতায় ফিরে আসায় লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিনই বিক্ষোভ করছেন।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের প্রথম ক্যাথলিক কার্ডিনাল চার্লস মং বো এক টুইট বার্তায় বলেছেন, মিয়ানমার একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দেশটির নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। পশ্চিমের কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সেনা জেনারেলদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে।
জান্তাকে অবশ্যই ক্ষমতা ছাড়তে হবে : যুক্তরাষ্ট্র
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারকে অবশ্যই ক্ষমতা ছেড়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জো বাইডেন নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন বলেছে, দেশটিতে বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে সাধারণ জনগণের আকাঙ্ক্ষার পক্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস সাংবাদিকদের বলেন, ‘সামরিক জান্তার প্রতি আমাদের অবস্থান বদলায়নি। তাদেরকে অবশ্যই ক্ষমতা ছেড়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। মিয়ানমারের মানুষের প্রতি আমাদের অবস্থানেরও পরিবর্তন হয়নি।’
নেড প্রাইস বলেন, ‘আমরা বার্মার জনগণের পাশে ও সঙ্গে আছি। বার্মায় একটি বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতায় ফেরাতে মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আমরা বিশ্বব্যাপী আমাদের সমমনা মিত্র এবং সহযোগীদের নিয়ে এই সমর্থন অব্যাহত রাখবো।’
এসএস