পরমাণু চুক্তি : অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে আপত্তি ইরানের

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ৫ টি রাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জ্যাকোপা) কার্যকর করতে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক আয়োজনের যে প্রস্তাব দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), তা বাতিল করে দিয়েছে তেহরান।
রোববার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিবজাদেহ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় শক্তিদের সাম্প্রতিক কার্যক্রম ও বিবৃতি আমলে নিয়ে ইরানের সরকার মনে করছে— এখন, এই সময়টি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের জন্য উপযুক্ত সময় নয়।’
অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের পরিবর্তে নিষেধাজ্ঞা তোলার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন খাতিবজাদেহ।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিভাগের প্রধান জোসেপ বরেল ইরান ও জ্যাকোপাতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার জবাবেই এ কথা বললেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
খাতিবজাদেহর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ‘দুঃখ’ প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, ‘এটা দুঃখজনক; বৈঠকে ইরানের উপস্থিতি প্রত্যাশিত ছিল।’
‘তবে বৈঠক হবে। যদি ইরান না আসে সেক্ষেত্রে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্যান্য দেশ— যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে বৈঠকে বসবে যুক্তরাষ্ট্র।’
ইরানকে পরমাণু প্রকল্প থেকে বিরত রাখতে দেশটির সঙ্গে ২০১৫ সালে জয়েন্ট জ্যাকোপা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ ইত্যাদি অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। ইরানের তেল, ব্যাংকিং এবং অর্থনৈতিক খাতগুলোর ওপর নতুন কিছু নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন।
তারপর থেকে আক্ষরিক অর্থেই অনিশ্চয়তার সুতোয় ঝুলতে থাকে পরমাণু চুক্তি জ্যাকোপা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচনে জয়ের পর বলেছিলেন—তিনি চান, জ্যাকোপা আবার কার্যকর হোক। তার এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তখনই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিল ইরান।
কিন্তু প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাইডেন প্রশাসন থেকে বলা হয়, ইরান চুক্তির শর্তগুলো যতদিন মেনে না চলবে ততদিন যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিতে ফিরবে না।
ফলে, চুক্তি পুনরায় কার্যকর করতে প্রথম পদক্ষেপ কে নেবে—তা নিয়ে সৃষ্টি হয় একপ্রকার অচলাবস্থা।
এদিকে সম্প্রতি ইরান ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর চুক্তিটি জিইয়ে রাখতে নড়েচড়ে বসে ইইউ। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেলের সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির ফোনালাপও হয়। সেই সূত্র ধরেই জ্যাকোপাতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিলেন জোসেপ বরেল।
এদিকে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সম্পূরক প্রোটোকলের আওতায় আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শক দলের জন্য পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনের সুযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে ইরান।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশ এবং বাইডেন প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি।
সূত্র: বিবিসি
এসএমডব্লিউ