দরিদ্রদের বিনামূল্যে রুটি দেওয়া হচ্ছে দুবাইয়ে
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রীর দাম ও জীবনযাত্রার ব্যয় হু হু করে বাড়তে থাকায় ভোগান্তি লাঘবে দরিদ্রদের বিনা পয়সায় রুটি দেওয়া হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র দুবাইয়ে।
ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে দুবাইয়ের বিভিন্ন সুপারমার্কেটে ১০টি ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে। আর সেইসব মেশিন থেকে স্যান্ডউইচ বানানোর জন্য উপযোগী লোফ, মধ্যপ্রাচ্য ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের রুটি পিট্টা ব্রেড ও ভারতীয় চাপাতি— এই তিন ধরনের রুটি সরবরাহ করা হচ্ছে।
প্রতিটি ভেন্ডিং মেশিনে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত টাচ স্ক্রিন আছে। সেই টাচ স্ক্রিনে স্পর্শ করলে তিন ধরনের রুটির নামসহ ছবি ভেসে উঠবে। ভোক্তা যে রুটি নিতে চাইবেন, টাচ স্ক্রিনে সেই রুটির ছবিতে স্পর্শ করলেই সেই রুটি সরবরাহ করবে ভেন্ডিং মেশিন।
মেশিনে একটি ক্রেডিট কার্ড রিডারও রয়েছে। কোনো ব্যক্তি যদি দুবাই প্রশাসনের এই সেবামূলক পদক্ষেপে অর্থসহায়তা করতে চান, সেক্ষেত্রে সেই কার্ড রিডারের মাধ্যমে তা তিনি করতে পারবেন। তবে রুটি নেওয়ার জন্য কোনো অর্থ দিতে হবে না।
নেপালি নাগরিক বিগান্দার দুবাইয়ের একটি গ্যারেজে গাড়ি ধোয়ার কাজ করেন। নিজের পূর্ণ নাম বলতে চাননি তিনি। এশিয়ার লাখ লাখ অভিবাসীর মতো বিগান্দারও দুবাইয়ে এসেছেন ভাগ্য পরিবর্তনের আশায়।
সুপারমার্কেটে রুটি সংগ্রহ করতে এসে এএফপিকে বিগান্দার বলেন, ‘আমার এক বন্ধু বলেছে— এখানে বিনা পয়সায় রুটি পাওয়া যায়, তাই এলাম।’
দুবাইয়ের পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জুলাই মাস থেকে দুবাইয়ে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং যাতায়াত ব্যয় বেড়েছে ৩৮ শতাংশ।
এই পরিস্থিতে দুবাইয়ের দরিদ্র লোকজন যেন বাড়তি ব্যয়জনিত ভোগান্তি এড়াতে পারেন, সেজন্যই ‘বিনামূল্যে রুটি বিতরণ’ প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। মূলত দুবাইয়ের শাসক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপপ্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের উদ্যোগেই শুরু হয়েছে এ প্রকল্প।
প্রকল্পের পরিচালক জায়নাব জৌমা আল তামিমি এএফপিকে বলেন, ‘দুবাইয়ের সুবিধাবঞ্চিত ও শ্রমজীবীরা তাদের অভাব জানাতে আমাদের কাছে আসার আগে আমরাই যেন তাদের কাছে পৌঁছাতে পারি— সেই চিন্তা থেকেই এই প্রকল্প শুরু হয়েছে। যে কেউ এই মেশিনে বোতাম চাপলেই টাটকা গরম রুটি পাবেন।’
মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি এবং এই জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে যাওয়া অভিবাসী। আকাশচুম্বি ভবনের নির্মানশ্রমিক থেকে শুরু করে যাবতীয় শ্রমসাধ্য কাজ করেন এই অভিবাসীরাই।
তবে এই শ্রমিকদের বেতন দুবাইয়ের জীবনযাত্রার ব্যয়ের হিসেবে এখনও অনেক কম। বিগান্দার যে গ্যারেজে কাজ করেন, সেখানে প্রতিটি গাড়ি ধুয়ে তার উপার্জন হয় মাত্র ৩ দিরহাম, অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৬ টাকা।
কঠোর পরিশ্রম ও গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয়া টিপসে মাস শেষে তার উপার্জন হয় ১৯০ থেকে ২৭০ ডলার।
‘মালিক আমার আবাসন ও যাতায়াতের ব্যয় বহন, কিন্তু খাবারের খরচ আমার নিজেরই বহন করতে হয়,’ এএফপিকে বলেন বিগান্দার।
এসএমডব্লিউ