চরম দুঃখ-দুর্দশায় পাকিস্তানি নারীরা

যুক্তরাষ্ট্রের ১৯ শতকের লেখক, অধিকারকর্মী ও নারীবাদী নেত্রী এলিজাবেথ ক্যাডি স্টান্টন বলেছিলেন, ‘সমাজ বিজ্ঞান নিশ্চয়তা দেয় সমাজে নারীদের উপস্থিতি সভ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করে।’
স্টান্টনের এই কথাটি বেশ ভালোভাবে যায় পাকিস্তানের বর্তমান সভ্যতার সঙ্গে, যেখানে নারীদের অবস্থান দিন দিন খারাপ হচ্ছে এবং তাদের জীবনমান আশঙ্কাজনকহারে হ্রাস পাচ্ছে। পাকিস্তানের নারীরা শুধুমাত্র পারিবারিক সহিংসতা নয়, তারা শিক্ষা ও কর্মের মতো অতি প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলো থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। দেশটির নারীর সরকারি সহায়তা তো পাচ্ছেনই না, সঙ্গে পাচ্ছেন না বেসরকারি সহায়তাও।
বর্তমানে পাকিস্তানের নারীর চরম দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে সময় পার করছেন। তারা সামাজিক-অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন। দেশটিতে বর্তমানে ২২ কোটিরও বেশি মানুষ বসবাস করছেন। যার মধ্যে প্রায় ৪৯ শতাংশই নারী। আর বেশিরভাগের বয়স ৩০ বছরের কম, যা পাকিস্তানকে বানিয়েছে বিশ্বের অন্যতম তারুণ্যনির্ভর একটি দেশ।
পাকিস্তানে নারীরা ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড, অ্যাসিড হামলা, জোরপূর্বক বিয়ের শিকার হচ্ছেন অহরহ। এছাড়া রয়েছে ভয়াবহ অনার কিলিং। মানবাধিকার কর্মীদের ধারণা দেশটিতে, প্রতিবছর অনার কিলিংয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন ১ হাজারেরও বেশি নারী।
অনার কিলিং হলো পারিবারিক সম্মান রক্ষার্থে নিজ মেয়ে বা বোনকে বাবা-ভাইয়ের হত্যা করা। পাকিস্তানে এ বিষয়টি নিষিদ্ধ হলেও, এই অনার কিলিং এখনো থামেনি। এই বর্বরতা বন্ধে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।
এছাড়া জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাল্য বিয়েও একটি ব্যধিতে পরিণত হয়েছে। সিন্ধ প্রদেশ বাদে দেশটির অন্য সব প্রদেশে ১৬ বছর হলেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে। যেখানে নেপালে ২০ বছর; বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও ভারতে মেয়েদের বিয়ের নূন্যতম বয়স ১৮ বছর। এই অঞ্চলে পাকিস্তান বাদে শুধুমাত্র আফগানিস্তানে মেয়েদের ১৬ বছর হলেই বিয়ে দেওয়া যায়।
দেশটির ১৮ শতাংশ মেয়েরই ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে বিয়ে হয়ে যায়। আর ৪ শতাংশের বয়স ১৫ হওয়ার আগেই অন্যের বাড়িতে সংসার সামলানোর জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে দেশটির মেয়েরা। পাকিস্তানে সব মিলিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার দেড় লাখ স্কুল আছে। কিন্তু এসব স্কুলে মেয়েদের উপস্থিতি পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি।
কিন্তু এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেও অনেক নারী যৌন হয়রানি বা পারিবারিক নির্যাতন নিয়ে একেবারে চুপ থাকছেন।
সাংবাদিক আর সি গাঞ্জোর কলাম
এমটিআই