ঋণে জর্জরিত পাকিস্তান, মাথাপিছু দেনার দায় পৌনে ২ লাখ রুপি
বৈদেশিক ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ছে পাকিস্তান। প্রতিবছর বেড়েই চলছে দেশটির মাথা পিছু ঋণের দায়। বর্তমানে দেশটির মাথাপিছু ঋণ পৌঁছেছে ১ লাখ ৭৫ হাজার পাকিস্তানী রুপি।
দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪০ দশমিক ৯৪ ট্রিলিয়ন পাকিস্তানী রুপি। পরবর্তী ১৪ মাসে, অর্থাৎ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই অংক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ ট্রিলিনয়ন রুপি।
পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যা ২১ কোটি ৬৬ লাখ। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী ঋণের এই টাকা যদি দেশের জনগণের মধ্যে সমানভাগে ভাগ করা হয়, সেক্ষেত্রে মাথা পিছু দেনার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৭৫ হাজার রুপি।
২০১৮ সালের পাকিস্তানের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন দল তেহরিক-ই-ইনসাফ। তার ক্ষমতা গ্রহণের আগে থেকেই বড় অংকের বৈদেশিক ঋণ শোধের চাপে ছিল পাকিস্তান; ইমরান খান দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই চাপ আরও বেড়ে যায়।
এক প্রতিবেদনে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে— সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, তেহরিক-ই-ইনসাফের আমলে গত আড়াই বছরে দেশটিতে বিদেশী ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
২০০৫ সালে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে পাস হওয়া একটি আইন অনুযায়ী, প্রতিবছর সরকারের দেনার পরিমাণ জাতীয় অর্থনীতির ৪ শতাংশের বেশি হওয়া কাম্য নয়; কিন্তু পাকিস্তানে বর্তমান ক্ষমতাসীন তেহরিক-ই-ইনসাফ সরকার সেই আইন মানতে তো পারেই নি; উপরন্তু দেনা বাড়িয়েছে দ্বিগুনেরও বেশি।
ক্রমবর্ধমান মাথাপিছু ঋণের পাশাপাশি আরও একটি বড় সমস্যার মুখোমুখী হতে যাচ্ছে পাকিস্তান। সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফের আমলে দেশের স্বর্ণের খনিগুলো নিয়ে কয়েকটি বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছিল দেশটির । ইমরান খানের সরকার ক্ষমতায় এসে সেই চুক্তিগুলো বাতিল করে। এর জেরে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে বিদেশী কোম্পানিগুলো এবং সেই মামলায় পাকিস্তান হেরে যায়।
ফলে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এখন ক্ষতিগ্রস্ত সেই কোম্পানিগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য পাকিস্তান। দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে বলা হয়েছে, যদি পাকিস্তানের সরকারি কোষাগার থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করা হয়, সেক্ষেত্রে দেশটির বিলাসবহুল বেশ কিছু সরকারি হোটেল নিলামে তোলা হতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন আরো বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের মাঝামাঝি পাকিস্তানের মোট বিদেশী ঋণের পরিমাণ ছিল ২৪ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন রুপি। সেই হিসেবে তখন মাথা পিছু ঋণের দায় ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জঙ্গিবাদ, ক্রমবর্ধমান দুর্নীতির মতো সমস্যায় বিব্রত পাকিস্তান সরকারকে বেশ বেকায়দায় ফেলেছে দেনার পরিমাণের এই উল্লফন। মধ্যপ্রাচ্যের মিত্র দেশগুলো ইতোমধ্যে চাপ দেওয়া শুরু করেছে দেশটির সরকারকে। গত বছর ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য পাকিস্তানকে একাধিকবার তাগাদা দিয়েছে সৌদি আরব। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে মধ্য প্রাচ্যে পাকিস্তানের অপর মিত্র দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ঋণ পরিশোধের জন্য পদক্ষেপ
দুর্ভাগ্যবশত, পাকিস্তান সরকার এখনও দেনা শোধ করার জন্য কোনও কার্যকর পদক্ষেপ করতে পারেনি; কোনো সমন্বিত পরিকল্পনাও পেশ করা হয়নি দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে।
পাকিস্তানের জনগণকেও সঠিক তথ্য জানানো হচ্ছে না। ফলে সেখানেও ধোঁয়াশা থেকে যাচ্ছে।
আবার, এক দেশের দেনা শোধ করার জন্য আরেক দেশের কাছে হাত পেতেই চলেছে পাকিস্তান সরকার, ফলে দেনা শোধ হওয়ার পরিস্থিতি আর দেশে তৈরি হচ্ছে না।
সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন
এসএমডব্লিউ