পাকিস্তানে বোমা হামলার তীব্র নিন্দা ইরানের
পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে বোমা হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইরান। রাজধানী ইসলামাবাদে ইরানের দূতাবাসের এক মুখপাত্র পাকিস্তানের সংবাদমাাধ্যম জিও নিউজকে বলেন, বেসামরিক লোকজনের ওপর এমন ভয়াবহ হামলা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ওই মুখপাত্র বলেন, ‘বেলুচিস্তানে ভয়াবহ বোমা হামলার জন্য দায়ী হামলাকারীদের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে ইরান। বেসামরিক লোকজনের ওপর এ ধরনের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পাকিস্তানের সরকার এবং হতাহতদের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি আমরা আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগের দিন বুধবার পাকিস্তানের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানে দুই প্রার্থীর কার্যালয়ে পৃথক দুই বোমা হামলায় অন্তত ২৮ জন নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের বেশিরভাগের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি এবং প্রাদেশিক আইনসভাগুলোর নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। তার আগের দিন বুধবার বেলুচিস্তানের পিশিন শহরে স্বতন্ত্র প্রার্থী আসফান্দ ইয়ার খান কাকারের কার্যালয় এবং কিল্লা সাইফুল্লাহ জেলায় জামায়াতে উলেমায়ে ইসলাম-ফজলুর’র (জেইউআইএফ) প্রার্থী মাওলানা আবদুল ওয়াসির নির্বাচনী কার্যালয়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে।
বোমা বিস্ফোরণে পিশিন শহরে ঘটনাস্থলেই ১৪ জন নিহত এবং ২৫ জন আহত হয়েছেন। কাছাকাছি সময়ে কিল্লা সাইফুল্লায় ঘটা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন এবং আহত হয়েছেন ২৫ জন।
পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডন জানিয়েছে, বুধবার দুপুর ১২টার দিকে পিশিনে আসফান্দ ইয়ার খান কাকারের কার্যালয়ে প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে। তার প্রায় এক ঘণ্টা পর কিল্লা সাইফুল্লায় ঘটে বিস্ফোরণ।
বেলুচিস্তান পুলিশের কর্মকর্তা জুম্মা দাদ মান্দোখায়েল দৈনিক ডনকে জানান,২ নির্বাচনী প্রার্থীকে লক্ষ্য করে এই হামলা পরিচালিত হয়েছিল; কিন্তু কাকতালীয়ভাবে হামলার সময় দুই প্রার্থীর কেউই ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকার এ ঘটনায় প্রদেশজুড়ে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে। প্রদেশের অপর পুলিশ কর্মকর্তা ইয়াসার বাজাই পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজকে জানিয়েছেন, আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। উচ্চতর চিকিৎসার জন্য তাদেরকে রাজধানী কোয়েটায় নিয়ে আসতে হেলিকপ্টার পাঠাচ্ছে প্রাদেশিক সরকার।
বেলুচিস্তান প্রাদেশিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তথ্যমন্ত্রী জান আচাকজাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বার্তায় বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, উভয় হামলার ধরনই এক—প্রার্থীদের কার্যালয়ের সামনে বোমা বহনকারী মোটর সাইকেল রাখা হয়েছিল। কারা এই হামলার জন্য দায়ী, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে আমাদের তদন্ত চলছে এবং আশা করছি শিগগিরই দোষীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’
প্রসঙ্গত, বেলুচিস্তানের সঙ্গে ইরানের সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশের সীমান্ত রয়েছে; তবে সেটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ দুর্বল। বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা মাঝে মাঝেই সীমান্ত পেরিয়ে সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশ হামলা চালায়। এছাড়া দুই দেশের অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানকারীদেরও তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে এই সীমান্তপথ দিয়ে।
গত ১৭ জানুয়ারি বেলুচিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইরান। এতে দু’জন নিহত হয়েছিল সেখানে। তার জবাবে পরের দিন ১৮ জানুয়ারি সিস্তান-বালুচিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় পাকিস্তানও। সেই হামলায় ইরানে নিহত হন ৭ জন।
দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এ ধরনের হামলা ঘটনা বেশ বিরল। পাল্টাপাল্টি হামলার কয়েক দিনের মধ্যেই অবশ্য দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ফের স্বাভাবিক হয়েছে।
এসএমডব্লিউ