এপ্রিলের পর একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখল যুক্তরাজ্য

করোনা মহামারি শুরুর পর এপ্রিলের ২৪ তারিখে একদিনে ১ হাজার ১০ জনের মৃত্যু দেখেছিল যুক্তরাজ্য। আর গতকাল মৃত্যু হয়েছে ৯৮১ জনের। এপ্রিলের ২৪ তারিখের পর দেশটিতে এটাই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭২ হাজার ৫৪৮ জন। বুধবার নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫০ হাজার ২৩ জন।
২৪ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে করোনায় আক্রান্তের হার আগের ৭ দিনের চেয়ে ১৯.৯ শতাংশ বেড়েছে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এসব তুলে ধরা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে নতুন করে আরও ১৫ হাজারের বেশি মৃত্যু হয়েছে। ফলে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ১২ হাজার ৪৬ জন। মোটা শনাক্ত হয়েছেন ৮ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার ২৭৬ জন। করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৫ কোটি ৮৮ লাখ ৬১ হাজার ৮০০ জন।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু দুটিতেই সবার ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ২ কোটি ২ লাখ ১৬ ৯৯১ জন প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আর মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭৭৮ জনের।
আক্রান্তের সংখ্যা তৃতীয়তে থাকলেও মৃত্যুর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পরই ব্রাজিলের অবস্থান। আর আক্রান্তের সংখ্যায় ব্রাজিলের ওপরে রয়েছে ভারত। ব্রাজিলে এ পর্যন্ত ৭৬ লাখ ১৯ হাজার ৯৭০ জনের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছে ওয়ার্ল্ডোমিটার। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৪০ জন। আর ভারতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ২ লাখ ৬৭ হাজার ২৮৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৭৪ জনের।
ধনী দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের সকল প্রান্তের মানুষ যেন করোনা টিকা পায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে টিকা বিতরণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস।
তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম।
বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ গতকাল বুধবার দুপুরে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫৩১ জনে। নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও ১ হাজার ২৩৫ জন। এর মাধ্যমে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ১২ হাজার ৪৯৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রেও নতুন স্ট্রেন শনাক্ত
যুক্তরাজ্য ধরা পড়া করোনার নতুন যে স্ট্রেনটি (পরিবর্তিত রূপ) নিয়ে নতুন করে আাবার উদ্বেগ বেড়েছে ওই ভাইরাসটি এবার যুক্তরাষ্ট্রেও শনাক্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে একজন রোগীর শরীরে ভাইরাসের নতুন এই ধরনটির খোঁজ মিলেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, তার ভ্রমণের কোনো ইতিহাস নেই। এর অর্থ হলো দেশেই অন্য কারো মাধ্যমেই তিনি ভাইরাসটির নতুন এই স্ট্রেনে শনাক্ত হয়েছেন।
বিভিন্ন দেশের টিকার সর্বশেষ পরিস্থিতি
মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট ফাইজার এবং জার্মানির জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ শুরু করেছে সিঙ্গাপুর। সৌদি আরবের পর এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বুধবার সিঙ্গাপুরে স্বাস্থ্যকর্মীদের শরীরে প্রয়োগের মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর এই টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় বলছে, কর্মসূচির আওতায় প্রথম টিকা নিয়েছেন দেশটির সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজের নার্স সারাহ লিম (৪৬) এবং চিকিৎসক কালিসভার মারিমুথু (৪৩)। আগামী ২০ জানুয়ারি টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেবেন তারা।
এদিকে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা নেওয়ার প্রায় ১১ দিনের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রে এজন নার্স করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর আসছে। মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় স্থানীয় দু’টি হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত ম্যাথিউ ডব্লিউ নামের ৪৫ বছর বয়স্ক ওই ব্যক্তি গত ১৮ ডিসেম্বর এক ফেসবুক পোস্টে বলেছিলেন, তিনি ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা টিকা নিয়েছেন।
চীনা ফার্মাসিউটিক্যালস জায়ান্ট সিনোফার্ম জানিয়েছে, তাদের উদ্ভাবিত করোনার টিকা ৭৯ শতাংশ কার্যকর। টিকাটির তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শেষে বুধবার এ কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্নার টিকার চেয়ে সিনোফার্মের টিকার কার্যকারিতা কম হলেও এশিয়া অঞ্চলে করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সিনোফার্মের এই টিকাকে সম্ভাব্য অগ্রগতি বলে মনে করা হচ্ছে।
আর প্রথম দেশ হিসেবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। ট্রায়ালের ফলাফল বিশ্লেষণ শেষে বুধবার টিকাটি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় দেশটির ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ।
অক্সফোর্ডের টিকা অনুমোদনকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ অভিহিত করে দেশটির সংবাদমাধ্যম বিবিসি লিখেছে, মানুষের জীবনযাপন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাজ্যে করোনার যে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে, এই টিকার অনুমোদনে তার ব্যাপক প্রসার ঘটবে।
এনএফ