জার্মানিকে ‘হাতি পাঠানোর’ হুমকি দিলেন বতসোয়ানার প্রেসিডেন্ট
জার্মানিতে ‘হান্টিং ট্রফি’ আমদানি নীতিতে বিধিনিষেধ জারির প্রস্তাব ওঠায় ক্ষুব্ধ হয়ে দেশটিতে ২০ হাজার হাতি পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন বতসোয়ানার প্রেসিডেন্ট মকগুয়েৎসি মাসাসি। সম্প্রতি জার্মান দৈনিক ডেইলি বিল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ হুমকি দিয়েচেন তিনি।
বন্য পশুপাখি শিকারের পর তাদের চামড়া, হাড়, দাঁত প্রভৃতি আলাদা করে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে যেসব পণ্য তৈরি হয়, সেগুলোকে সাধারণভাবে ‘হান্টিং ট্রফি’ বলা হয়। পৃথিবীর বৃহত্তম স্থলচর প্রানী হাতির ‘হান্টিং ট্রফি’ হলো সেটির দাঁত এবং হাড়।
জার্মানি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ হান্টিং ট্রফি আমদানিকারী দেশ। ইউরোপের অনেক দেশ জার্মানির কাছ থেকে হান্টিং ট্রফি কেনে। যেসব দেশ থেকে হান্টিং ট্রফি আমদানি করে জার্মানি, সেসবের মধ্যে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশ বতসোয়ানাও রয়েছে। জার্মানিতে হাতির দাঁত ও হাড় রপ্তানি করে বতসোয়ানা।
সম্প্রতি জার্মানির পার্লামেন্টে হান্টিং ট্রফি আমদানি নীতিতে বিধিনিসেধ জারির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রস্তাবটি এনেছেন কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থা গ্রিন পার্টির জার্মানি শাখার নেতা স্টেফি লেমকে নিজে।
এর প্রতিক্রিয়ায় বুধবার দৈনিক বিল্ডকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট মকগুয়েৎসি মাসাসি বলেন, ‘বার্লিনে বসে বন্যপশুপাখির জন্য দরদ দেখানো খুব সহজ; কিন্তু আবেগ আর বাস্তবতা এক নয়। বিশ্ব এবং লেমকের সমর্থকদের জন্য হাতি সংরক্ষণ করছি আমরা, আর সেজন্য যথেষ্ট মূল্যও আমাদের দিতে হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, বিশ্বের অন্যতম বিপন্ন বন্যপ্রাণী হাতির দু’টি প্রজাতি রয়েছে- এশীয় এবং আফ্রিকান। বতসোয়ানায় আফ্রিকান হাতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার হাতি রয়েছে বতসোয়ানায়।
৫ লাখ ৮১ হাজার ৭৩০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশ বতসোয়ানার লোকসংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। সাক্ষাৎকারে মাসাসি জানান, হাতির পালের কারণে ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়া, ফসলের ক্ষেত উজাড় হয়ে যাওয়া এবং পদদলিত হয়ে মানুষ মৃত্যু বতসোয়ানায় নিয়মিত দুর্ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হাতির সংখ্যা কমাতে সম্প্রতি দুই প্রতিবেশী দেশ অ্যাঙ্গোলায় ৮ হাজার এবং মোজাম্বিকে ৫০০ হাতি পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মাসাসি।
দ্য বিল্ডকে বতসোয়ানার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা জার্মানিতে ২০ হাজার হাতি পাঠাতে চাই। কারণ হাতির জন্য দরদ দেখানো আগে হাতির সঙ্গে বসবাসের অভিজ্ঞতা তাদের থাকা উচিত। আমরা উপহার হিসেবে এসব হাতি পাঠাতে চাই এবং এ ব্যাপারে জার্মানির কোনো আপত্তি শুনতে আমরা প্রস্তুত নই।’
২০১৪ সালে হাতি শিকার নিষিদ্ধ করেছিল বতসোয়ানা। তবে জনগণের চাপে ২০১৯ সালে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে কোটা নির্ধারণ করে দিয়েছে দেশটির সরকার।
এদিকে, জার্মানির পরিবেশ মন্ত্রণায়ের মুখপাত্র মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, বতসোয়ানার সরকার এর আগে কখনও জার্মানির সঙ্গে এই ইস্যুতে কোনো কথাবার্তা বলেনি, তবে তারপরও তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন।
এপিকে ওই মুখপাত্র বলেন, ‘হান্টিং ট্রফি আমদানিতে বিধিনিষেধের কারণে যেসব আফ্রিকান দেশ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকিতে আছে, তাদের সবার সঙ্গে বিকল্প আর্থিক উৎস নিয়ে আমরা আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছি, এসব দেশের মধ্যে বতসোয়ানাও রয়েছে।’
‘তবে জীববৈচিত্র রক্ষার জন্য হান্টিং ট্রফির ব্যবসা নিরুৎসাহিত করা জরুরি এবং এই ব্যাপারে জার্মানি অনড়।’
সূত্র : আলজাজিরা
এসএমডব্লিউ