অভ্যুত্থান চেষ্টা নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে: বেনিনের সরকার

বেনিনে একদল সৈন্য রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ক্ষমতা দখলের দাবি করার পর পশ্চিম আফ্রিকার দেশটির সশস্ত্র বাহিনী বলেছে, অভ্যুত্থানচেষ্টা নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে। রোববার দেশটির সরকারের এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে বলে খবর দিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গত কয়েক বছরে বেনিনের প্রতিবেশী নাইজার ও বুরকিনা ফাসোসহ মালি, গিনি এবং গত মাসে গিনি-বিসাউয়ে ক্ষমতা দখলে নেয় সেনাবাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে বেনিনের সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানচেষ্টা ওই অঞ্চলে গণতান্ত্রিক শাসনের জন্য নতুন হুমকি তৈরি করেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার সকালের দিকে অন্তত আটজন সৈন্য রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হয়ে কর্নেল টিগ্রি পাস্কালের নেতৃত্বাধীন একটি সামরিক কমিটি ক্ষমতা গ্রহণ করেছে বলে ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তারা দেশের সব জাতীয় প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করার পাশাপাশি সংবিধান স্থগিত এবং আকাশ, স্থলপথ ও সমুদ্রবন্দর বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
সৈন্যদের একজন বিবৃতি পাঠ করতে গিয়ে বলেন, সেনাবাহিনী বেনিনের জনগণকে সত্যিকার অর্থে একটি নতুন যুগের আশা দেওয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ; যেখানেখানে ভ্রাতৃত্ব, ন্যায়বিচার এবং কাজের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হবে।
তবে কয়েক ঘণ্টা পর দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলাসানে সাইদু এক বিবৃতিতে বলেছেন, পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশের সশস্ত্র বাহিনী অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। সরকার জনগণকে স্বাভাবিক নিয়মে তাদের দৈনন্দিন কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানায়।
এর আগে, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওলুশেগুন আজাদি বাকারি রয়টার্সকে বলেন, সৈন্যদের ‘‘ছোট একটি দল’’ সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছে। তবে প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস তালনের অনুগত বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানকারীরা শুধু রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছে।
• বিভিন্ন এলাকায় গুলির শব্দ
রোববার সকালে মানুষ যখন গির্জায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন দেশটির সবচেয়ে বড় শহর ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র কটোনুর কয়েকটি এলাকায় গুলির শব্দ শোনা যায়। দেশটিতে নিযুক্ত ফরাসি দূতাবাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে বলেছে, কটোনু শহরে প্রেসিডেন্ট তালনের বাসভবনের কাছে গুলিবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। ফরাসি নাগরিকদের বাসায় থাকার আহ্বান জানিয়েছে দূতাবাস।
বেনিনে আগামী এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির মাঝেই রোববারের এই অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় ২০১৬ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা তালনের দায়িত্ব শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
দেশটির আগামী নির্বাচনে বেনিনের ক্ষমতাসীন জোটের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে অর্থমন্ত্রী রোমুয়াল্ড ওয়াদাগনিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকারের বর্তমান সংস্কার এজেন্ডা এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।
তালনের দুই মেয়াদ শেষে দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকা অঞ্চলে বিরল হিসেবে দেখা হয়, যেখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ক্রমবর্ধমান অবনতির মুখে রয়েছে। টেলিভিশনে পড়া বিবৃতিতে সৈন্যরা উত্তর বেনিনে অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন।
দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ঘুরে দাঁড় করানোর কৃতিত্ব তালনকে দেওয়া হলেও সম্প্রতি জঙ্গি হামলা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেশী মালি ও বুরকিনা ফাসোতেও জঙ্গিদের ক্রমবর্ধমান হামলায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
গত এপ্রিলে বেনিন সরকার বলেছিল, জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার একটি সহযোগী গোষ্ঠীর হামলায় দেশের উত্তরাঞ্চলে অন্তত ৫৪ সেনা নিহত হয়েছেন। বেনিন গত মাসে নতুন সংবিধান চালু করা হয়েছে। এই সংবিধানে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে সাত বছর করা হয়।
সমালোচকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন জোটের ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার প্রচেষ্টা হিসেবে সংবিধানে এই সংশোধনী আনা হয়েছে। আর এই জোট অর্থমন্ত্রী রোমুয়াল্ড ওয়াদাগনিকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স, এএফপি।
এসএস