এক বছরে সাগরে পড়েছে ১৫০ কোটি মাস্ক

একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বোতল, স্ট্র ও কান পরিষ্কারের কাঠির মতো ব্যবহৃত জিনিস ছুঁড়ে ফেলায় মারাত্মকভাবে দূষিত সাগরে ২০২০ সালে প্রায় ১৫০ কোটি মাস্ক গিয়ে পড়েছে বলে আনুমানিক এক হিসাব দিয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।
মহামারি করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা মাস্ক ব্যবহারের পর মাস্কগুলো যত্রতত্র ছুড়ে ফেলছি। এসব মাস্কে থাকা বিভিন্ন উপাদান পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সাগরে বাস করা প্রাণীদের জন্যও এগুলো বিপজ্জনক।
ওশান্স এশিয়ার অপারেশন্স ডিরেক্টর গ্যারি স্টোকস বলছেন, ‘এখন আমাদের মাস্কের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। করোনার কারণে এখন এসব সৈকতে ভেসে আসছে। এসব দেখে আমার মনে প্রশ্ন জাগে, আমাদের পৃথিবীর জন্য এই মাস্কগুলো কতটা বিপজ্জনক? কেন এত মাস্ক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নষ্ট না হয়ে সাগরে এসে পড়ছে এবং এগুলো ধ্বংস করার সঠিক উপায় কী?’
জার্মানির একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংস্থার কর্মকর্তা ব্যার্নহার্ড শোড্রোভস্কি বলছেন, ‘অনেক কাপড়ের কিংবা সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক বা রাবারের গ্লাভস ব্যবহার করছেন। এসব ময়লার পাত্রে ফেলার কথা। মেডিকেল আবর্জনা হওয়ায় এগুলো পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সব মাস্ক পোড়ানো হচ্ছে না। ফলে সাগরগুলো মাস্কে ভরে যাচ্ছে।’

পানিতে বাস করা প্রাণীর জন্য মাস্ক কতটা ক্ষতিকর আর কী দিয়ে মাস্ক তৈরি করা হয় জানতে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদক ফার্মেসি থেকে একটি এফএফপি২ মাস্ক কেনেন। তারপর শুরু হয় তার মনে ওঠা প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার চেষ্টা।
পরে বার্লিনের সুপার মার্কেট থেকে আরেকটি মাস্ক কেনেন। এরপর অনলাইনে আরও দুই ধরনের মাস্ক অর্ডার করেন। সব মাস্ক প্যাকেট করে পরীক্ষার জন্য একটি টেক্সটাইল ল্যাবরেটরিতে পাঠান। প্রতিবেদকের আশা ছিল, ওই ল্যাবরেটরি তাকে মাস্কগুলো কী দিয়ে তৈরি, তা জানাতে পারবে। পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তাও বলতে পারবে।
দুই সপ্তাহ পর ল্যাব থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ভালো খবর হচ্ছে, মাস্ক পরা আমাদের মানুষদের জন্য ক্ষতিকর নয়। দিনে ৮ ঘণ্টা মাস্ক পরে থাকা ঠিক আছে। সময়টা এর চেয়ে বেশি হলে কিছু সমস্যা হয়। কিন্তু পরিবেশের জন্য গল্পটা অন্যরকম।
সিটিএল ল্যাবরেটরির ফাইট হুবেন বলেন, ‘আপনি যদি গ্রামের কোনো খোলা জায়গায় মাস্ক ফেলেন তাহলে শুরুতেই সেটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মাস্কের কিছু উপাদান যেমন পলিপ্রোপিলিন ডিকম্পোজ হতে অনেক সময় লাগে। এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা এবং এ কারণে মাস্ক সবসময় ঠিক জায়গায় ফেলা উচিত। যদি সবাই বনের যেখানে-সেখানে মাস্ক ফেলেন তাহলে সেটা অনেকদিন সেখানেই থেকে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক পর্যায়ে ওই মাস্ক মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়। যে কারণে মাস্ক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। হংকংয়ের সৈকতে বিজ্ঞানীরা অনেক মাস্ক পাচ্ছেন। তাদের ধারনা, গতবছর প্রায় ১৫০ কোটি মাস্ক সাগরে গিয়ে পড়েছে।’
গ্যারি স্টোকস বলছেন, ‘প্রথমেই আমাদের মাস্ক একবার ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের সরকার কীভাবে মাস্কের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করছে সেটা দেখতে হবে। যেমন এখানে রাস্তায় থাকা ডাস্টবিনের মুখ অনেক বড়। মানুষ সেখানে মাস্ক ফেলে ভাবছে যে তারা ঠিক কাজটি করছেন। কিন্তু বাতাস এলে এগুলো সহজেই উড়ে যায়। আর একবার রাস্তায় পড়ে গেলে সেগুলো ড্রেনে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই ড্রেনগুলো সাগরে গিয়ে মিশেছে। সুতরাং ব্যক্তিগত পর্যায় ছাড়াও সরকারি স্তরে উদ্যোগ থাকতে হবে।’
মনে হচ্ছে শিগগিরই মাস্ক পরার হাত থেকে রেহাই মিলছে না। ইতোমধ্যে কোটি কোটি মাস্ক গিয়ে সাগরে পড়েছে। আমরা যদি নিজেদের দায়িত্বটুকু পালন করি তাহলে অন্তত সমস্যা আরও বড় হওয়ার আগেই তা ঠেকানো যেতে পারে।
এএস