যৌন হয়রানির দায়ে নিউইয়র্কের গভর্নর কুয়োমোর পদত্যাগ

যৌন হয়রানির দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো (৬৩)। যৌন হয়রানির অভিযোগে গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, অন্তত ১১ নারীকে তিনি জোরপূর্বক চুম্বন বা যৌন ইঙ্গিতমূলক মন্তব্য করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও শীর্ষ ডেমোক্রেটরা তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ফেডারেল আইনের কারণেও তিনি বেশ বেকায়দায় ছিলেন।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে কুয়োমো বলেন, ‘পদে থাকা অবস্থায় অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা রাজ্য সরকারকে অচল করে দেবে। এর পেছনে করদাতাদের লাখ লাখ ডলার খরচ করতে হবে যখন করোনা মহামারি দেশের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, এই পরিস্থিতিতে, আমার সাহায্য করার সর্বোত্তম উপায় হলো যদি আমি সরে যাই। সরকারকে সরকারের কাজ করতে দেই- তাই আমি সেটাই করব।’
তার সরে যাওয়ার ফলে পশ্চিম নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট লেফটেন্যান্ট গভর্নর ক্যাথি হোচুল (৬২) রাজ্যের সংবিধান অনুয়ায়ী কুয়ামোর মেয়াদ শেষ না হওয়ায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গভর্নরের দায়িত্ব পালন করবেন। ফলে এই প্রথম কোনো নারী গভর্নর পেতে যাতে নিউইয়র্কবাসী।
হোচুল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি গভর্নর কুয়ামোর পদত্যাগের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত। এটি সঠিক চিন্তা এবং নিউ ইয়র্কারদের জন্য সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।’
গত ৩ আগস্ট যৌন হয়রানির অভিযোগে গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রধান নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস বলেছিলেন, ‘যৌন হয়রানির অভিযোগে পাঁচ মাসের তদন্তের ফলাফলে দেখা গেছে যে গভর্নর একটি ‘বিষাক্ত’ কর্মস্থল তৈরি করেছেন। এছাড়াও জনসম্মুখে প্রথম অভিযোগ উত্থাপনকারীর বিরুদ্ধে তার অফিস অবৈধভাবে প্রতিশোধ নেয়।’
তখন এক ভিডিওবার্তায় কুয়োমো এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন যে তার পদত্যাগ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। ২০১১ সাল থেকে তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা এই ডেমোক্রেটিক গভর্নর এই প্রতিবেদন যথাযথ নয় ও পক্ষপাতদুষ্ট বলে উল্লেখ করেছিলেন।
তিনি জানিয়েছিলেন, ‘অভিযুক্তরা তার কথা, অঙ্গভঙ্গি ও আচরণের ভুল ব্যাখ্যা করেছে। নারীদের প্রতি তার আচরণ আন্তরিকতা প্রকাশের উদ্দেশ্য ছিল।’
তদন্তের পর তিনি দ্রুত জনপ্রিয়তা হারানো এক গভর্নর হিসেবে পরিণত হয়েছেন। কুয়োমো করোনা মহামারির শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। ভবিষ্যত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় ছিলেন তিনি।
কুয়োমোর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি ১৬৮ পৃষ্ঠার বিশাল প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই তদন্ত প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন নথি নিরীক্ষাসহ ১৭৯ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে তদন্ত কমিটি। তার ভিত্তিতে জানা গেছে, অঙ্গরাজ্যের অনেক নারী কর্মীকে বাজেভাবে স্পর্শ করাসহ উদ্দেশ্যপূর্ণ মন্তব্য করতেন গভর্নর।
এর আগে, নিউইয়র্কের এই গভর্নরের বিরুদ্ধে অন্তত সাত নারী লিখিতভাবে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন। তার প্রেক্ষিতে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি কাজ করে রিপোর্ট দিয়েছে। সেখানেই কোয়ামো যে যৌন হয়রানির সঙ্গে জড়িত তার প্রমাণ মিলেছে।
সূত্র : রয়টার্স
ওএফ