ফ্যাক্ট-চেকারদের ভিসা নিষিদ্ধ করছে যুক্তরাষ্ট্র

ফ্যাক্ট-চেকার, কনটেন্ট মডারেটর, কমপ্লায়েন্স বা অনলাইন নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতৃত্বাধীন প্রশাসন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে এই বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছে।
বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, তথ্যের নিয়ন্ত্রণ ও ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানে মার্কিন পররাষ্ট্রদপ্তরের নির্দেশের একটি স্মারক ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স হাতে পেয়েছে। নতুন এই ভিসা বিধি-নিষেধ প্রযুক্তি খাতের কর্মীদের, বিশেষ করে ভারতসহ কয়েকটি দেশের আবেদনকারীদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রদপ্তরের ওই স্মারকে কনস্যুলার কর্মকর্তাদেরকে ‘‘সুরক্ষিত মতপ্রকাশের সেন্সরশিপ বা সেন্সরশিপের প্রচেষ্টায় জড়িত কিংবা তাদের সহযোগীদের’’ ভিসা আবেদন বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এই নির্দেশনা সাংবাদিক ও পর্যটক ভিসাসহ সব ধরনের ভিসার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।’’
তবে এইচ-১বি ভিসার আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে নতুন এই বিধি-নিষেধ কার্যকরে জোর দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এইচ-১বি ভিসা সাধারণত প্রযুক্তি ও সংশ্লিষ্ট খাতে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের দেওয়া হয়। মার্কিন এই ভিসার বেশিরভাগই পান ভারত-চীনসহ বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটি দেশের প্রযুক্তিকর্মীরা।
ভিসার আবেদনকারীদের পেশাগত ইতিহাস, লিংকডইন প্রোফাইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এর মাধ্যমে তথ্য যাচাই, কনটেন্ট মডারেশন, ট্রাস্ট অ্যান্ড সেফটি অথবা কমপ্লায়েন্স-সংশ্লিষ্ট কাজে ভিসার আবেদনকারীরা জড়িত ছিলেন কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। এসব কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিললে আবেদনকারী মার্কিন ভিসার অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন।
মার্কিন এই ভিসা নীতি অনলাইন নিরাপত্তায় যুক্ত পেশাজীবীদের নিশানা করে তৈরি করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক অনলাইন কনটেন্ট, ইহুদিবিরোধী বক্তব্য কিংবা ক্ষতিকর অনলাইন কনটেন্ট মোকাবিলায় কাজ করা ব্যক্তিরা এই নীতির আওতায় পড়বেন।
২০২৩ সালের অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট বাস্তবায়নকারী যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারাও নতুন বিধিনিষেধের আওতায় ভিসা সমস্যায় পড়তে পারেন। কারণ আইনটি সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানির ওপর সাইবারফ্ল্যাশিং বা ক্ষতিকর কনটেন্ট প্রচারের মতো অপরাধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন নতুন এই ভিসা নির্দেশনাকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষা হিসেবে দাবি ধরেছে। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিবেচনায় নীতিটি তৈরি করা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রদপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘আমরা কথিত ফাঁস হওয়া নথি নিয়ে মন্তব্য করি না। তবে এটা স্পষ্ট, আমাদের প্রশাসন আমেরিকানদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় এবং বিদেশিদের সেন্সর করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এমন বিদেশিদের সমর্থন করি না, যারা যুক্তরাষ্ট্রে এসে সেন্সরের ভূমিকা পালন করতে চায়। বিদেশিদের দিয়ে এমন সেন্সরশিপ করানো আমেরিকান জনগণকে অপমান ও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
পার্টনারহিরোর ট্রাস্ট অ্যান্ড সেফটির ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যালিস গগুয়েন হান্সবার্গার মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এনপিআরকে বলেছেন, ‘‘ট্রাস্ট অ্যান্ড সেফটি কাজকে সেন্সরশিপের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা আমাকে বিস্মিত করছে। ট্রাস্ট অ্যান্ড সেফটি একটি বিস্তৃত ক্ষেত্র; যা শিশু সুরক্ষা, শিশু-সম্পর্কিত অপরাধমূলক কনটেন্ট প্রতিরোধ, প্রতারণা, জালিয়াতি ও শোষণ ঠেকানোসহ জীবনরক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ কাজের অন্তর্ভুক্ত। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোতে বৈশ্বিক কর্মীদের উপস্থিতি আমেরিকানদের আরও নিরাপদ রাখে।’’
চলতি বছর মার্কিন প্রশাসন বিদেশি সাংবাদিকদের ভিসা সীমিত করেছে। দেশটির সরকারি ওয়েবসাইট থেকে জলবায়ু পরিবর্তন-সংশ্লিষ্ট তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে। এমনকি হোয়াইট হাউসের ব্রিফিংয়েও কিছু সাংবাদিককে নিষিদ্ধ এবং কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
গত মে মাসে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছিলেন, ‘‘যেসব বিদেশি আমেরিকানদের অধিকার ক্ষুণ্ন করতে কাজ করেন, তারা আমাদের দেশে ভ্রমণের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নন। লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ বা অন্য কোথাও; যারা আমেরিকানদের অধিকার ক্ষুণ্ন করে তাদের প্রতি সহনশীলতার দিন শেষ।’’
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স।
এসএস