ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা, হতাশা দেশত্যাগী আফগানদের

তালেবান বাহিনী আফগানিস্তান দখলের জেরে যেসব আতঙ্কিত আফগান দেশটি থেকে পালিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় লাভে সক্ষম হয়েছেন, ছেড়ে আসা মাতৃভূমির জন্য বেদনা বোধ করছেন তারা। আফগানিস্তানে রয়ে যাওয়া আত্মীয়দের জন্য দুশ্চিন্তাও হচ্ছে তাদের।
দোহার আবাসিক এলাকায় আশ্রয় নেওয়া এক আফগান নারী বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমার জন্য দেশ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব কঠিন ছিল, কারণ আমি আমার দেশকে ভালবাসি।’
রয়টার্সকে ওই নারী জানান, তার স্বামী পেশায় একজন দন্ত চিকিৎসক এবং তিনি আফগানিস্তানে একটি আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থায় চাকরি করতেন। আন্তর্জাতিক এনজিওসমূহ এবং নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্ট করা তালেবান বাহিনী কাবুল দখলে অগ্রসর হচ্ছে – এমন সংবাদ পেয়েই স্বামী ও তিন সন্তানসহ কাবুল বিমানবন্দরে যান তিনি, এবং কোনো প্রকারে একটি ফ্লাইটে করে দোহায় এসে পৌঁছান।
রয়টার্সকে ওই নারী জানান, তিনি বিমানবন্দরে যখন পৌঁছেছিলেন, তার আগ থেকেই সেখানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও হট্টগোল শুরু হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অবস্থারত সেনা বাহিনী গুলি চালিয়েছিল এবং তার ঠিক পেছনে দাঁড়ানো একজন ব্যক্তির পায়ে গুলি লেগেছিল।
তবে এই ঘটনার সত্যতা নিরপেক্ষ উৎস থেকে নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স।
ওই নারী বলেন, ‘এটি ছিল খুবই আতঙ্কজনক একটি পরিস্থিতি এবং এখনও ওই দৃশ্য আমাকে তাড়া করে ফিরছে।’
আফগানিস্তানের যেসব নাগরিক বাইরের দেশে আশ্রয় নিতে দেশ ত্যাগ করেছেন, তাদের কিছু অংশকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় দেশ কাতার। রাজধানী দোহার একটি আবাসিক এলাকায় সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েক হাজার আফগান।
এমন আর একজন আফগান নাগরিকের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। পেশায় আইনজীবী ওই ব্যক্তি রয়টার্সকে বলেন, আফগানিস্তানে থাকলে তার জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ত, কারণ তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোম্পানির পক্ষে কাজ করতেন।
‘সবচেয়ে বড় যে বিপদ, আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি আশা করার কিছু আর এখন নেই। আমাদের সামনেও একটি খুব কঠিন ও সংকটপূর্ণ জীবন অপেক্ষা করছে।’
আরেক আফগান, যিনি বিশ্বিবিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, কাবুল দখলের পর তালেবানের যোদ্ধাদের লুটতরাজের বর্ণনা দিয়ে বলেন, তিনি দেখেছেন সশস্ত্র তালেবানরা বিমানবন্দর অভিমুখী লোকজনকে হয়রানি করছে।
নিজের বোনকে সঙ্গে নিয়ে কাতারে পালিয়ে আসা এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র এখন জানেন না কীভাবে তিনি পড়ালেখা শেষ করবেন। নিজের স্ত্রীকে দেশে ফেলে এসেছেন তিনি, দেশ ছাড়ার আগে যাকে তিনি বিয়ে করেন ভিডিও কলের মাধ্যমে।
‘আমাদের মন দেশেই পড়ে আছে কারণ আমাদের পরিবার সেখানে আছে। আমার স্ত্রী সেখানে আছেন, আমার বাবা-মা, ভাই-বোনেরা। আমি শুধু আশা করছি তারাও যাতে বের হয়ে আসতে পারেন ... যদি সেটা না হয় এবং পরিস্থিতি বদলে যায়, আমার ধারণা, আমি মনকে প্রস্তুত করব এবং দেশে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করব।’
সূত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ