করোনায় আক্রান্ত বয়স্কদের স্ট্রোকের ঝুঁকি কতটা, কী বলছে গবেষণা

করোনাভাইরাসের নতুন অতিসংক্রামক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের তাণ্ডবে সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে অনেকেই দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারও আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকে টিকা নিয়েও সংক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। তবে ওমিক্রনের উপসর্গ তেমন জটিল নয়। বেশিরভাগই বাড়িতে থেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন। হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না।
তবে সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্য জায়গায়। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, করোনায় আক্রান্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের স্ট্রোকের সম্ভাবনা রয়েছে। আর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রথম তিন দিনে স্ট্রোকের সেই সম্ভাবনা অন্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
এমনকি আক্রান্ত হওয়ার ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেও অনেকের মধ্যে থাকে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা। আর তাই যেসব বয়স্ক ব্যক্তিরা কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
গবেষণায় বলা হয়েছে, যাদের বয়স ৬৫ থেকে ৭৪ বছরের মধ্যে তাদের ক্ষেত্রে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু যাদের বয়স ৮৫ এবং আগে একবার স্ট্রোক হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা কম। সম্প্রতি আমেরিকান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের একটি কনফারেন্সেই প্রাথমিক এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আসন্ন আন্তর্জাতিক স্ট্রোক কনফারেন্সে রিপোর্টটি প্রকাশ করা হবে।
গবেষণার প্রধান লেখক এবং যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিষয়ক প্রধান সরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-র হার্ট ডিজিজ অ্যান্ড স্ট্রোক প্রিভেনশন বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী কোয়ানহে ইয়াং বলছেন, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে কোভিড পরবর্তী জটিলতা ও হার্ট অ্যার্টাকের ঝুঁকি বাড়ছে। এ বিষয়ে রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সচেতন থাকা উচিত।
ইয়াং আরও বলেন, করোনা টিকা এবং অন্যান্য আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থাই পারে গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে। টিকা ও সতর্কতা একইসঙ্গে কোভিডজনিত কারণে হৃদরোগের ঝুঁকিও অনেকখানি হ্রাস করে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ৩৭ হাজার ৩৭৯ জনের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়। আর এখান থেকেই উঠে আসে কোভিডে আক্রান্ত হওয়া ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে হৃদরোগের সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি।
বলা হচ্ছে, বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই রক্তনালী ব্লক হয়ে যাচ্ছে, আর এ কারণেই হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ছে। কোভিড সংক্রমণের পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল ২০২০ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স্ক ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রথম ৪-৭ দিনের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। এরপর ৮-১৪ দিনের মধ্যে সেই ঝুঁকি কমে দাঁড়ায় ৪৪ শতাংশে। যদিও কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরও অনেকে আবার আক্রান্ত হচ্ছেন হৃদরোগে। তবে সেই সংখ্যাটা মাত্র ৯ শতাংশ।
অবশ্য করোনায় কোন বয়সের মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন আর কাদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি সে বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন কোয়ানহে ইয়াং। স্ট্রোকে মস্তিষ্কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। আর তাই এই বিষয়টির দিকে নজর রাখার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া বয়স্কদের ক্ষেত্রে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি। একইসঙ্গে স্ট্রোক সংক্রান্ত যাবতীয় সতর্কতাও কিন্তু মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্ট্রোক মূলত মানুষের মস্তিষ্কে আঘাত হানে।
ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে মস্তিষ্কের কোষগুলো মরে গেলে স্ট্রোক হয়। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য শরীরের প্রতিটি কোষে রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন। কারণ এই রক্তের মাধ্যমেই শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পৌঁছায়।
টিএম