হাসপাতালে চাকরি করতে ডাক্তার হওয়া লাগে না
সবার মধ্যেই একটি ধারণা প্রচলিত আছে, হাসপাতালে শুধুমাত্র ডাক্তাররাই কাজ করবেন। কিন্তু একটি হাসপাতাল সচল রাখতে বিশাল দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন। যারা হাসপাতালের এইচআর, মার্কেটিং, ডিজিটাল বিভাগ, প্রকিউরমেন্ট, সাপ্লাই-চেইন-ম্যানেজমেন্ট, একাউন্টস, নিরাপত্তা বিভাগ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কাজ করেন। অর্থাৎ হাসপাতালে চাকরি করতে ডাক্তার হওয়া লাগে না।
সম্ভাবনা ও বিশাল সুযোগ থাকলেও গতানুগতিক ভুল চিন্তাধারা ও দক্ষতার অভাব থাকায় সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারছেন না আমাদের দেশের অধিকাংশ চাকরি প্রত্যাশীরা।
দেশের অধিকাংশ চাকরি প্রত্যাশীর ধারণা পরিচিত কারো সুপারিশ ছাড়া চাকরি হয় না। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতে চাকরি করতে হলে সবাই চায় ভালো একটি কোম্পানিতে চাকরি করতে। সেটা আবার হতে হবে কোনো ব্যাংক বা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি। সঙ্গে চাই প্রত্যাশিত বেতন।
আরও পড়ুন > হোটেল ম্যানেজমেন্ট : কোথায় পড়বেন, কী শিখবেন, আয়-রোজগার কেমন
তবে এই সেক্টরে যথাযথ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জনশক্তির অভাব। তাই অল্প বেতনে চাকরি শুরু করলেও প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করা যায় এই সেক্টরে।
বর্তমানে দেশে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। যেখানে ডাক্তার, নার্স ও টেকনোলজিস্ট ছাড়াও মার্কেটিং, সেলস, এইচআরএম, প্রকিউরমেন্ট, একাউন্টস ও অন্যান্য ডিপার্টমেন্টে অনার্স/ মাস্টার্স অথবা বিবিএ, এমবিএ করা দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজনীয়তা অনেক।
একটি হাসপাতালের ৩০-৪০ শতাংশ ডাক্তার কাজ করেন। বাকি ৬০-৭০ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রয়োজন অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের জন্য। যাদের চাকরীর জন্য এমবিবিএস সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই।
ব্যক্তিগত ভাবে প্রায় ১২ বছর আগে বিবিএ শেষ করে ক্যারিয়ার শুরু করি এ্যাপলো হাসপাতালের কাস্টমার কেয়ার অফিসার হিসেবে। সেখানে কাজ করার সুযোগ হয়েছে বিলিং, ভিআইপি ক্লায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট ও কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স বিভাগে।
আরও পড়ুন > বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে কি কি যোগ্যতা লাগে
পথ পরিক্রমায় কাজ করেছি বিডিজবস ডট কমসহ সিঙ্গাপুরের ফেরার পার্ক হসপিটাল, ম্যাক্সওয়েল হসপিটাল সার্ভিসেস ও ল্যাবএইড গ্রুপে। প্রায় ১০ বছরের ক্যারিয়ারে কাজ করেছি অপারেশন্স, মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশনস, বিজনেস ডেভেলপমেন্টসহ হাসপাতালের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টে।
উদাহরণ দিয়ে বললে- প্রডাক্ট লঞ্চ, প্যাকেজ লঞ্চ, স্ট্রাটেজিক বিভাগ, ডিজিটাল প্রেজেন্স (বুস্টিং, লিডস ম্যানেজমেন্ট, ইউটিউব), এ্যাডসেন্স, মিডিয়া বায়িং ও পিআর সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টে। বর্তমানে কাজ করছি সিনিয়র ম্যানেজার, মার্কেটিং বিভাগ, এএমজেড হাসপাতালে।
ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় জুড়ে অনুভব করেছি এত জনশক্তির দেশে হাসপাতাল সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার যে পরিমাণ সম্ভাবনা রয়েছে তার এক তৃতীয়াংশই অসম্পূর্ণ। কারণ সঠিক দিক নির্দেশনার অভাব। অনেক আগে আমরা যারা এই হাসপাতাল সেক্টরে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম সেই হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া নতুন কোনো দক্ষ ও নির্ভরশীল প্রার্থী যোগ হচ্ছে এই সেক্টরে।
ভালো বেতন, প্রভিডেন্স ফান্ড ও গ্রাচুয়িটি সহ সব সুযোগ সুবিধাই পাওয়া যায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সঠিক যোগ্যতা ও দক্ষতার বিকাশে বেতন পাওয়া যায় যেকোনো কর্পোরেট বা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির মতই বা তার চেয়েও বেশি।
আশার কথা হচ্ছে, করোনা কালীন ও তার পরবর্তী সময় অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রির জন্য ক্ষতিকর হলেও হাসপাতাল এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে ব্যবসা ও ইনভেস্টমেন্ট। তাই বুমিং এই ইন্ডাস্ট্রি হতে পারে ক্যারিয়ার গড়ার আদর্শ ও নির্ভরযোগ্য সেক্টর।
লেখক : সিনিয়র ম্যানেজার, মার্কেটিং বিভাগ, এএমজেড হাসপাতাল লিমিটেড
