বিচার শুরু হয়নি ৩ বছরেও, জামিনে আসামিরা

তিন বছর আগে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নথি জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ওই বছরের ৫ মে কার্যালয়ের পরিচালক বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশের তদন্ত শেষে মামলা দায়ের এখতিয়ার যায় দুদকের কাছে।
পরে দুদকের করা মামলায় তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ১৮ মে আদালতে আট জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে দুদক। চার্জশিট দাখিলের এক বছর পার হয়ে গেলেও মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়নি। এরই মধ্যে মামলার প্রধান আসামিসহ ছয় জন জামিনে কারামুক্ত হয়েছেন।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে বিচারাধীন। গত ১৬ এপ্রিল এ মামলার দিন ধার্য ছিল। ওই দিন পলাতক আসামি আজাদের সম্পত্তি ক্রোকের প্রতিবেদন দাখিলের কথা থাকলেও তা দাখিল হয়নি। এজন্য আদালত আগামী ১৪ মে পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন। এছাড়া তিন বছর ধরে কারাগারে আটক থাকা আসামি ফাতেমা, ফরহাদ ও রুবেলের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এ মামলার অভিযুক্তরা হলেন– নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি মো. শাহজাহান, ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম মুমিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন, ডেসপাচ রাইডার মো. রুবেল, এয়ার কমোডর (অবসরপ্রাপ্ত) এম আব্দুস সামাদ আজাদ, ছাত্রলীগ নেতা মো. ফরহাদ হোসেন ওরফে মিকি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক অফিস সহায়ক ফাতেমা খাতুন ও তার ছেলে রবিউল আওয়াল। এদের মধ্যে আসামি রবিউল আওয়াল কারাগারে আটক রয়েছেন ও আজাদ পলাতক। আট জনের মধ্যে বাকি ছয় আসামি জামিনে রয়েছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২০ সালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এনামুল হক, বুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুর রউফ এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদের নাম প্রস্তাব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেই সারসংক্ষেপের নথি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হলে তিনি অধ্যাপক ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেন। পরে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে প্রস্তুত করার
আগে নথিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহায়ক ফাতেমা খাতুনের কাছে যায়। সেসময় এম আবদুস সালাম আজাদ অনুমোদন পাননি বলে ছাত্রলীগ নেতা তরিকুলকে জানান ফাতেমা।
২০২০ সালের ১ মার্চ নথিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কৌশলে বের করে আসামিরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ‘টিক চিহ্ন’ (ড. এমদাদুল হকের নামের পাশে) কলম দিয়ে টেম্পারিং করে সেখানে ক্রস চিহ্ন দেন। আর প্রফেসর মো. আবদুর রউফের নামের পাশে ক্রস চিহ্ন এবং এয়ার কমোডর (অব.) এম আবদুস সামাদ আজাদের নামের পাশে ‘টিক চিহ্ন’ দেন।
ওই বছরের ৫ মে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ‘টিক চিহ্ন’ জাল বা টেম্পারিং করা এবং তা সঠিক বলে ব্যবহার করার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আলম বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১১ জুলাই আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। তবে অভিযোগ দুদকের এখতিয়ারভুক্ত হওয়ায় পরবর্তীতে কমিশনের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী বাদী হয়ে আট জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
অতি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় নথি জালিয়াতি করার অভিযোগে ২০২২ সালের ১৮ মে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় চার্জশিট দাখিল করে দুদক। ওই বছরের ২১ জুলাই আদালত মামলাটির চার্জশিট আমলে নেন। ওই দিন পলাতক আসামি আজাদ ও রবিউলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে এ মামলায় রবিউল গ্রেপ্তার হন। তবে আজাদ পলাতক থাকায় তার সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত।
আসামি ফাতেমার আইনজীবী মশিহুর রহমান বলেন, মামলায় প্রকৃত আসামিকে আড়াল করে ফাতেমাকে ভিকটিমাইজড করা হয়েছে। মামলায় সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছর অথচ তিন বছর কারাভোগ করেছেন তিনি। ফাতেমা সম্পূর্ণ নির্দোষ।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, এ মামলার পলাতক এক আসামির সম্পত্তি ক্রোকের বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। প্রতিবেদন আসার পর তাকে আদালতে হাজিরের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। এরপরও আদালতে হাজির না হলে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে। আশা করছি, দ্রুতই বিচার কাজ শেষ হবে।
এনআর/এসএসএইচ/
