ফু-ওয়াং ফুডসের সাবেক এমডি ও তার দুই মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ফু-ওয়াং ফুডসের ৭০ কোটি ৮৪ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৮ টাকার হিসাব গরমিলিলের অভিযোগ এনে সাবেক ব্যবস্থাপনা আরিফ আহমেদ চৌধুরী, তার দুই মেয়ের নামে আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। জাপানি বিনিয়োগকারী ও ফু -ওয়াং ফুডসের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিয়া মামুন আদালতে এই মামলাটি দায়ের করেন। গত ১৬ এপ্রিল ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিসকেসটি দায়ের করা হয়।
মামলার এজহারে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে জাপান-বাংলাদেশ জয়েন ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশ বিএসইসির মধ্যস্থতায় একটি পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টের মাধ্যমে ফু-ওয়াং ফুডসের ৮৪ লাখ লাখ ৪২ হাজার ৭২৬ স্পন্সর শেয়ার আরিফ আহমেদ চৌধুরী, তার দুই কন্যার কাছ থেকে ক্রয় করেন। এরপর মিনোরি বাংলাদেশ এর পক্ষে ফু-ওয়াং ফুডসের পরিচালনা পর্ষদে তিনজন নমিনেটেড পরিচালক নিয়োগ করা হয়।
শেয়ার ক্রয়ের চুক্তির ৪ এর দুই ধারা অনুযায়ী, সাবেক এই তিন পরিচালক সাত কর্মদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে প্রতিষ্ঠানটির দায়দেনার হিসাব ও তা পরিশোধ করার কথা বলা হয়েছে। আর ৪ এর ৩ ধারা অনুযায়ী, এ দায়দেনা কোনোভাবেই মিনোরি বাংলাদেশের ওপর বর্তাবে না। অথচ দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তার দুই মেয়ে চুক্তির শর্ত পরিপালন করেননি।
এই বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে গত ৯ জানুয়ারি একটি লিগ্যাল নোটিশও পাঠানো হয় আরিফ আহমেদ চৌধুরী ও তার দুই মেয়ের নামে। সেই নোটিশের কোনো আইনি জবাব দেননি তারা। এরপর ১৬ এপ্রিল আদালতে মিসকেস দায়ের করা হয়। কেস নং ১৬৩/ ২০২৫।
আরও পড়ুন
মামলায় এজাহারে মিনোরির পক্ষে বলা হয়, শেয়ার বিক্রির চুক্তি অনুযায়ী আরিফ আহমেদ চৌধুরী ও তার দুই মেয়ে ফু-ওয়াং ফুডস কোম্পানির ৭০ কোটি টাকার ভ্যাট ও ট্যাক্সের হিসাব গোপন করেছেন এবং শর্ত অনুযায়ী সব পক্ষকে এর হিসাব দেননি।
আদালতে দায়ের করা মামলার বিষয়ে মিনোরি বাংলাদেশের আইনজীবী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন জানান, আরিফ আহমেদ চৌধুরীর আমলে তিনি ফু-ওয়াং ফুডসের প্রায় ৭০ কোটি টাকার ভ্যাট ট্যাক্স তথ্য গোপন করেছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে কি পরিমাণ অর্থ খরচ করেছেন শেয়ার বিক্রির পর সেটারও যথাযথ হিসাব সকল পক্ষকে বুঝিয়ে দেননি। তাই ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকিসহ বিশাল অঙ্কের টাকার হিসাব সঠিকভাবে প্রদানের জন্য এই মিসকেসের দায়ের করা হয়েছে। তারা যদি আদালতে নির্দেশ অমান্য করে তাহলে। যদি আদালতে সঠিক হিসাব না দয়। তাহলে পরে ফৌজদারি মামলাসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই বিষয় জানতে চাইলে ফু-ওয়াং ফুডসের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিয়া মামুন বলেন, শেয়ার ক্রয়ের চুক্তি অনুযায়ী আরিফ আহমেদ চৌধুরী কোম্পানির ৭০ কোটি টাকার হিসাব আমাদের কাছে গোপন করেছেন৷ এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কি ভাবে কোথায় খরচ করেছেন তিনি সেটা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হলেও কোনো জবাব দেননি। তাই বাধ্য হয়ে আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ গরমিল থাকার কারণে বর্তমানে কোম্পানির উৎপাদন চালাতেও ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
জানা গেছে, আরিফ আহমেদ চৌধুরী ও তার দুই মেয়ে বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন। আরিফ আহমেদ চৌধুরী ঢাকা ১৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থী ছিলেন। তার মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে বারবার কল করা হলেও তিনি প্রত্যুত্তর দেননি।
এনআর/এমএ