গুলি করার পর হৃদয়ের রক্তাক্ত দেহটি নদীতে ফেলে দেয় পুলিশ

নাম হৃদয়। বয়স ২০ বছর। অসচ্ছল পরিবারে বেড়ে ওঠা তার। কাঁধে সংসারের বোঝা থাকায় লেখাপড়ার পাশাপাশি চালাতেন রিকশা। কোনোভাবে চলছিল পরিবার। কিন্তু অদম্য এই মেধাবীকে বাঁচতে দিলো না ‘পাষণ্ড’ পুলিশ। খুব কাছে থেকে গুলি চালিয়ে হৃদয়ের জীবন কেড়ে নেওয়া হয়। এমনকি ছেলের লাশটাও খুঁজে পাননি মা। রক্তাক্ত নিথর দেহটি রাতের আঁধারে ফেলে দেওয়া হয় তুরাগ নদীর কড্ডা ব্রিজের নিচে।
হৃদয়কে সেদিনের গুলি করার দৃশ্যটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরা হয়। মর্মান্তিক সেই চিত্র দেখাতেই নীরবতা নেমে আসে ট্রাইব্যুনালের এজলাসে।
জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্কের দ্বিতীয় দিন ছিল সোমবার (১৩ অক্টোবর)। এ দিন বেলা ১১টা থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
প্রথম দিনের মতো জুলাই-আগস্টের বিভিন্ন পটভূমি তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। একপর্যায়ে গত বছরের ৫ আগস্ট গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে চালানো পুলিশের নৃশংসতা নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় ট্রাইব্যুনালে।
আরও পড়ুন
ভিডিওতে দেখা যায়, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর কোনাবাড়ী থানা এলাকায় বিজয় মিছিল বের করেন ছাত্র-জনতা। আর এ মিছিলে অংশ নেন হৃদয়। মুহূর্তেই ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছুড়তে থাকে পুলিশ। জীবন বাঁচাতে সবাই আশ্রয় নেন নিরাপদ স্থানে। কিন্তু হৃদয়কে ধরে আনেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। ঘিরে রাখা হয় তাকে। বড় লাঠি নিয়ে একজন আঘাত করতে এগিয়ে আসতেই আরেকজন এই কলেজছাত্রকে চড় মারেন। হঠাৎ কিছু বুঝে না উঠতেই হৃদয়কে পেছন থেকে গুলি করেন কনস্টেবল আকরাম। আর এতেই প্রাণ হারান তিনি।
এ প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনালকে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, কলেজছাত্র হৃদয়ের লাশটি রাতের আঁধারে গাজীপুরের কড্ডা নদীতে ফেলে দেয় পুলিশ। শহীদ হৃদয়কে কাছ থেকে গুলি করেন কোনাবাড়ী থানার কনস্টেবল আকরাম। এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন এই কনস্টেবল।
তিনি বলেন, শহীদ হৃদয়ের লাশের সন্ধানে কড্ডা নদীতে ডুবুরি নামিয়ে খোঁজা হয়েছিল। কিন্তু নদীটি প্রচণ্ড খরস্রোতা হওয়ায় লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে লাশ না পেলেও হৃদয়কে গুলি করা পুলিশ কনস্টেবল আকরাম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি সব বর্ণনা তদন্ত সংস্থার কাছে তুলে ধরেছেন বলেও জানান চিফ প্রসিকিউটর।
হৃদয়ের বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার আলমনগর গ্রামে। তার বাবার নাম লাল মিয়া। হৃদয় হেমনগর ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি কোনাবাড়ীতে অটোরিকশা চালাতেন।
এমআরআর/এসএসএইচ