আশুলিয়ায় ৬ লাশ পোড়ানোর মামলা : ১৮ সাক্ষীর সাক্ষ্য-জেরা শেষ

জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ১৩তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (২০ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
এদিন বেলা ১১টার পর থেকে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ১৭তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন এএসপি এনায়েত ও শহীদ বায়োজিদ বোস্তামীর ভাই কারিমুল। পরে তাদের জেরা করেন পলাতক আট আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এখন পর্যন্ত এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৮ জন সাক্ষী।
ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার ও সাইমুম রেজা তালুকদার।
আরও পড়ুন
গত ১৬ অক্টোবর ১৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন সিআইডির ফরেনসিক শাখার আলোকচিত্র বিশেষজ্ঞ ওমর ফারুক খান। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ১৫ অক্টোবর এ মামলায় ১১তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ৯ অক্টোবর দশম দিনে সাক্ষ্য দেন শহীদ ওমর ফারুকের বাবা চান মিয়া। ১৪তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিতে গত বছরের ৫ আগস্টের বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি।
গত ৮ অক্টোবর নবম দিনের মতো এ মামলায় সাক্ষ্য দেন এএসআই মনিরুল ইসলাম। তিনি জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। ৭ অক্টোবর সাক্ষ্য দেন কনস্টেবল রাশেদুল ইসলাম। তিনি ওই দিনের পুরো বর্ণনা তুলে ধরেন। ২৮ সেপ্টেম্বর সপ্তম দিনে নবম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া একাত্তর টিভির স্থানীয় সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম অনিকের জেরা শেষ হয়।
এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ দিনে অনিকসহ দুজন জবানবন্দি দিয়েছেন। ২৪ সেপ্টেম্বর প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া শফিকুল ইসলামের জেরা শেষ হলে আট নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাত নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন শফিকুল। একই দিন সাক্ষ্য দেন প্রত্যক্ষদর্শী মতিবর রহমান। ১৮ সেপ্টেম্বর এ মামলার তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দেন দুজন সাক্ষী। ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম দিনের মতো এ মামলায় সাক্ষ্য দেন শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম ও শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার সেই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরেন। ২১ আগস্ট এ মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ওই সময় উপস্থিত আট আসামির সাতজনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে দোষ স্বীকার করেন এসআই শেখ আবজালুল হক। একইসঙ্গে রাজসাক্ষী হতে চেয়ে মামলার ব্যাপারে যা জানেন সব আদালতের কাছে বলতে চেয়েছেন। পরে তার দোষ স্বীকারের অংশটুকু রেকর্ড করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজসাক্ষী হয়েছেন তিনি।
এ মামলায় গ্রেপ্তাররা হলেন- ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ আটজন এখনও পলাতক রয়েছেন।
গত ২ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে অন্যান্য তথ্যসূত্র হিসেবে ৩১৩ পৃষ্ঠা, সাক্ষী ৬২, দালিলিক প্রমাণাদি ১৬৮ পৃষ্ঠা ও দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়। পরে এ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয় তরুণ। এরপর পুলিশ ভ্যানে তাদের লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাকেও বাঁচতে দেননি তারা। পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এ ঘটনায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।
এমআরআর/এমজে