জেআইসি সেলে গুমের মামলা : অভিযোগ গঠনের আদেশের দিন পেছাল

আওয়ামী লীগের টানা শাসনামলে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টারে (জেআইসি) গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেনা কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ পিছিয়ে আগামী ১৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। প্যানেলের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এদিন এ মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য ছিল। তবে আজ নতুন দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল। গত ৯ নভেম্বর উপস্থিত তিন আসামির অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু। চারটি গ্রাউন্ড এনে এ অব্যাহতি চান তিনি। বেআইনি আটক, অপহরণ, নির্যাতন; এই তিনটি গ্রাউন্ড বিবেচনায় নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বাকি গ্রাউন্ড হলো গুম রাখা। দুলুর শুনানি শেষে পলাতক আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী হাসান ইমাম, আমির হোসেনসহ অন্যরা।
এ মামলায় পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। ৭ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানিতে জেআইসি সেলে সরকারবিরোধী ঘরানার লোকদের তুলে নিয়ে গুম-নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি। একইসঙ্গে ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুম হওয়া ২৬ জনের বীভৎসতা সামনে আনেন। এসব ঘটনায় পাঁচটি অভিযোগ এনে এ মামলায় ১৩ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর।
গ্রেপ্তার তিন সেনা কর্মকর্তা হলেন- ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
শেখ হাসিনাসহ পলাতক অন্য আসামিরা হলেন- শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) লে. জেনারেল (অব) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব) সাইফুল আবেদিন, লে. জেনারেল (অব) মো. সাইফুল আলম, সাবেক ডিজি লে. জেনারেল তাবরেজ শামস চৌধুরী, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব) হামিদুল হক, মেজর জেনারেল তৌহিদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ ও লে. কর্নেল (অব) মখসুরুল হক।
এর আগে, ২৩ নভেম্বর পলাতকদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। স্বেচ্ছায় লড়তে চাইলে শেখ হাসিনার আইনজীবী হন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেডআই খান পান্না। তবে শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে ৩ ডিসেম্বর তা প্রত্যাহার করলে মো. আমির হোসেনকে শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা এ মামলার তিন সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠান ট্রাইব্যুনাল।
একইসঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজিরের জন্য সাতদিনের মধ্যে দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। ৮ অক্টোবর এ মামলায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
এমআরআর/জেডএস