মরদেহ পোড়ানোর মামলা : জেরার মুখে তদন্ত কর্মকর্তা

চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আশুলিয়ায় ছয় মরদেহ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা জানে আলম খানের দ্বিতীয় দিনের জেরা চলছে। এ মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ মোট আসামি ১৬ জন।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ জেরা শুরু হয়। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
এদিন জানে আলমকে জেরা করছেন ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফীর আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান। শুরুতেই করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষে রয়েছেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, সাইমুম রেজা তালুকদারসহ অন্যরা।
এর আগে, ১৪ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে দেওয়া সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তদন্ত কর্মকর্তা জানে আলম খানের জেরা শুরু হয়। গত ২ ডিসেম্বর প্রথম দিনের মতো ২৪ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন তিনি। তার জেরা সম্পন্ন হলেই মামলাটি যুক্তিতর্কের ধাপে যাবে।
গত ২৬ নভেম্বর এ মামলার ২০তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওই দিন পুনঃজবানবন্দি দেন তদন্ত সংস্থার লাইব্রেরিয়ান এসআই আনিসুর রহমান। যদিও ১৫ নম্বর সাক্ষী হিসেবে আগেই সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি। ২০ নভেম্বর রাজসাক্ষী এসআই শেখ আবজালুল হকের জেরা সম্পন্ন হয়। ১৯ নভেম্বর ২৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন ট্রাইব্যুনাল-২। সবমিলিয়ে ২২ কার্যদিবসে মোট ২৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
এ মামলায় গ্রেপ্তার আট আসামি হলেন, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, এসআই শেখ আবজালুল হক ও কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ আটজন এখনও পলাতক রয়েছেন।
চলতি বছরের ২১ আগস্ট এ মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। ওই সময় উপস্থিত আট আসামির সাতজনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে দোষ স্বীকার করেন এসআই শেখ আবজালুল হক। একইসঙ্গে রাজসাক্ষী হতে চেয়ে মামলার ব্যাপারে যা জানেন সব আদালতের কাছে বলতে চেয়েছেন। পরে তার দোষ স্বীকারের অংশটুকু রেকর্ড করা হয়। একইসঙ্গে লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজসাক্ষী হওয়ার অনুমতি পান তিনি। ২ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে অন্যান্য তথ্যসূত্র হিসেবে ৩১৩ পৃষ্ঠা, সাক্ষী ৬২, দালিলিক প্রমাণাদি ১৬৮ পৃষ্ঠা ও দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়। পরে এ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয় তরুণ। এরপর পুলিশ ভ্যানে তাদের লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাকেও বাঁচতে দেননি তারা। পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এছাড়া এর আগের দিন একজন শহীদ হয়েছিলেন। এ ঘটনায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।
এমআরআর/এসএম