বইমেলার অনুভূতি
বইমেলা শেষ হওয়ার আগেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে একটা এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করতে চাচ্ছিলাম বারবার। যেন বই পড়ার প্রতি মানুষের উৎসাহ ও বইমেলায় মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ে। লেখবো লেখবো করে কাটিয়ে দিলাম বেশ কয়েকদিন, অফিশিয়াল ব্যস্ততায় হয়েও উঠছিলো না।
অনেকদিন পর এবার ঢাকা, খুলনা, কলকাতা, তিন জায়গার তিনটা মেলা দেখলাম, তিনটাতেই ভিন্নতা ছিল বেশ।
প্রথমে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বইমেলা হিসেবে পরিচিত বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় গিয়েছিলাম। মেলায় অনেক লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গুণীজন ও প্রবাসীর সঙ্গে দেখা হলো।
ঢাকার একুশে বইমেলা আমাদের মতো প্রবাসীদের জন্য খুবই চমৎকার একটি জায়গা। এখানে বিভিন্ন পেশার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়। বাংলাদেশের বন্ধু-বান্ধব, আধুনিকমনা লোকদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ হয়। অনেক বন্ধু, বড় ভাই, পরিবারের অনেকেই এই সময়টাতে বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করেন।
২০২৩ সালের বইমেলাও ছিল ঠিক তেমনি এক মিলনমেলা। এমন অনেকেরই সাথে দেখা হয়েছে যারা ঢাকার বাইরে মংলা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন। অনেক ফ্যান ফলোয়ার্সের সাথে চলতে ফিরতে ধাক্কাও খেয়েছি। ছোট ভাই-বোন, ভ্রমণপ্রিয়দের সঙ্গে আড্ডা জমেছিলো বেশ।
কলকাতার বইমেলা আর ঢাকার মেলায় বেশ পার্থক্য নজরে পড়েছে, ঢাকার মেলায় আমরা অনেকটা যেন সেলফি আর ঘুরাঘুরিই করতে আসি, আর খুঁজে খুঁজে পরিচিতদের বই কিনি, স্বার্থের খাতিরে তাদের খুশি করার চেষ্টা করি।
বইমেলায় সেজেগুজে ঘুরাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, ছবি তোলা, ভিডিও করা, কেমন যেন নিয়মরক্ষার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরেকটা মজার বিষয় খেয়াল করেছি, এখানে পাঠকের থেকে লেখক-সাংবাদিক, কবি-সাহিত্যিকদের পরিমাণই বেশি। অনেকের আবার ভাবনা এমন যে, বই কেন কিনতে হবে! এ বছর মেলায় বইয়ের দামও রাখা হচ্ছে অনেক বেশি। আমি নিজেও পাঁচ ছয়টার বেশি বই কিনতে পারিনি।
এরপর দুদিন গিয়েছিলাম আমার জন্মভূমি খুলনার বইমেলায়। সেই বইমেলার দৃশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা গিয়েছে। একদিকে পিঠা-খাবারের দোকান, জুয়েলারিগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়, অন্য দিকে বইয়ের দোকানে লেখক থেকে শুরু করে সাধারণ বই বিক্রেতা সবাই যেন মাছি মারছে। বইমেলায় এমন দৃশ্য আমাকে অবাক করেছে।
প্রথমদিন (বুধবার) দেখলাম একেবারে লোক নেই। আমি বেছে বেছে খুলনার লেখকদের প্রকাশ করা বইগুলো কেনার চেষ্টা করেছি, আমার ইন্সপায়ারিং youths library এর ছেলেমেয়েদের বই গিফট করার জন্য ও তাদের পড়তে উৎসাহিত করতে বইমেলায় নিয়ে গিয়েছিলাম শুক্রবারে। বেশ কিছু বই, পোস্ট কার্ড উপহার দিয়েছি।
১০-১২টা বই কিনে স্থানীয় সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিকদের সাথে ছবি তুললাম, আমাদের খুলনার স্থানীয় ইউটিউবার গোপালদাও ছিল।
তবে খুলনার বইমেলায় বই রেখে সস্তা জিনিসপত্র নিয়ে মানুষকে ব্যস্ত হতে দেখে খুবই হতাশ হয়েছি। এরপরও আমরা চাই বইয়ের প্রতি মানুষের ভালোবাসা জন্মাতে এরকম বইমেলা হোক খুলনায়।
এরপর ১২ ফেব্রুয়ারি গিয়েছিলাম কলকাতার বইমেলায়। সেদিন ছিল মেলার শেষ দিন। এখানে বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র, যেন তিল ঠাঁই নেই অবস্থা। বইয়ের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। মানুষের হাতে গাদাগাদা বই।
ভালোভাবে খেয়াল করলাম, আমি ছাড়া কেউই তেমন ছবি তুলছে না, ভিডিও করছে না। এদিকে বাংলাদেশের বইমেলায় মানুষকে দেখা যায় হাঁসের মাংস খেতে, আড্ডা দিতে, সেজেগুজে সেলফি তুলতে।
এখানে পরিচয় হয়েছে, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও অনেক গুণীজনের সাথে। অনেক বইও সংগ্রহ করেছি এখান থেকে। কলকাতার বইমেলায় প্রত্যেক বাঙালি আফসোস করেছেন এত অল্প সময়ে তাদের বইমেলা শেষ হয়ে যাওয়ায়। কিন্তু লম্বা সময় নিয়ে বাংলাদেশে বইমেলা হলেও বইয়ের বেচা-বিক্রি খুবই কম!