ছুটির দিনে লোকে লোকারণ্য বইমেলা, এসেছে সর্বোচ্চ সংখ্যক নতুন বই
অমর একুশে বইমেলায় ছুটির দিনে পাঠক ও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সববয়সী মানুষ, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তাছাড়া বইমেলায় আজ ১৬তম দিনে প্রকাশিত হয়েছে ২৯৮টি নতুন বই। মেলা শুরুর পর নতুন প্রকাশিত বইয়ের এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
বাংলা একাডেমি জানায়, আজ মেলা শুরু হয়েছে সকাল ১১টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অমর একুশে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩০জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে।
প্রতিযোগিতায় ক শাখায় ১ম হয়েছে ফারহিনা মোস্তাক আযওয়া, ২য় হয়েছে অংকিতা সাহা রুদ্র এবং ৩য় হয়েছে ফাবলিহা মোস্তাক আরওয়া। খ শাখায় ১ম হয়েছে সমৃদ্ধি সূচনা স্বর্গ, ২য় হয়েছে সুবহা আলম এবং ৩য় হয়েছে অন্বেষা পণ্ডিত। গ শাখায় ১ম হয়েছে সিমরিন শাহীন রূপকথা, ২য় হয়েছে আবদুল্লাহ আল হাসান মাহি এবং ৩য় হয়েছে তাজকিয়া তাহরীম শাশা। এতে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন আবৃত্তিশিল্পী ড. ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, ডালিয়া আহমেদ এবং ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়- স্মরণ : ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হারিসুল হক।
তিনি বলেন, জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আব্দুল মালিক যে সময়টিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তখন এদেশের মানুষ যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, বসন্ত ও পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণ করত। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল ডা. আব্দুল মালিকের কর্মদক্ষতা, মেধা ও যোগ্যতা প্রদর্শনের অনুপম ক্ষেত্র। তিনি যে দেশমাতৃকার সুযোগ্য সন্তান সেটি তিনি তার কাজের ব্যাপ্তির মাধ্যমেই প্রমাণ করে গেছেন।
তিনি বলেন, জাতিকে নীরোগ রাখতে, বিশেষ করে হৃদরোগের ক্ষেত্রে তিনি বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তার চিন্তায় সবসময় জাগরূক থাকতো এদেশের মানুষের সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি। তিনি মনে করতেন ধনী-গরীব উভয় পরিবারের সন্তানদের জন্যই ন্যূনপক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী, ফজিলাতুন নেছা মালিক এবং এস এম মোস্তফা জামান।
তারা বলেন, বাংলাদেশের হৃদ্রোগ চিকিৎসার পথিকৃৎ জাতীয় অধ্যাপক আব্দুল মালিকের ভেতর উচ্চশিক্ষা অর্জনের প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল। চিকিৎসাব্যবস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত ও আধুনিক করে তোলার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তবে তিনি কেবল স্বপ্নদ্রষ্টাই ছিলেন না, একজন রূপকারও ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি গণমানুষের স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার প্রবল আগ্রহ, দৃঢ় প্রচেষ্টা ও দূরদর্শিতার কারণেই বাংলাদেশের হৃদ্রোগ চিকিৎসা আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত হয়েছে।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, দেশের মানুষের হৃদ্রোগ চিকিৎসার জন্য অধ্যাপক আব্দুল মালিক আজীবন কাজ করে গেছেন। তিনি কেবল ভালো চিকিৎসকই ছিলেন না, একজন অসাধারণ শিক্ষক ও জনদরদি মানুষও ছিলেন। তার কীর্তির মধ্য দিয়েই তিনি গণমানুষের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন গবেষক ড. এম আবদুল আলীম, কথাসাহিত্যিক নাহার মনিকা, কবি স্নিগ্ধা বাউল এবং শিশুসাহিত্যিক অপু বড়ুয়া।
আগামীকালের বইমেলার সময়সূচি
আগামীকাল (১৭ ফেব্রুয়ারি) শনিবার অমর একুশে বইমেলার ১৭তম দিন। মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর। সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : শহীদ সাবের এবং স্মরণ : পান্না কায়সার শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মনির ইউসুফ এবং মামুন সিদ্দিকী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন গিয়াস উদ্দিন, সুভাষ সিংহ রায়, রতন সিদ্দিকী এবং শমী কায়সার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রামেন্দু মজুমদার।
আরএইচটি/পিএইচ