৬ দিনে বইমেলায় বেরিয়েছে ২৭৫ নতুন বই, শুক্রবার শিশুপ্রহর

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে অনুষ্ঠিত হওয়া এই মেলায় দেশি-বিদেশি লেখকদের হাজারো নতুন বই প্রকাশিত হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বইমেলা শুরুর প্রথম ৬ দিনে মোট ২৭৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে। আর আগামীকাল (শুক্রবার) প্রথম ছুটির দিনে বরাবরের মতো এবারও শিশুদের জন্য থাকছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ‘শিশুপ্রহর’।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আজ অমর একুশে বইমেলার ষষ্ঠ দিন। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায়। মেলায় আজ নতুন বই এসেছে ৮০টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : মাহবুবুল হক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তারিক মনজুর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মাহবুব বোরহান এবং মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ আজিজুল হক।
প্রাবন্ধিক বলেন, মাহবুবুল হক বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও ভাষাবিজ্ঞানী। বাংলা ভাষার ব্যাকরণ প্রণয়ন এবং বাংলা বানান সংস্কারে তিনি নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদান যুগান্তকারী। তিনি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের বাংলা পাঠ্যবই রচনা ও সম্পাদনার কাজ করেছেন। মাহবুবুল হক কার্যকর অর্থেই রাষ্ট্রীয় ও প্রয়োগ-উপযোগী ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে দেখতে চেয়েছেন। এর সফলতার জন্য তিনি ভাষার অবয়ব পরিকল্পনায় প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছেন। শিক্ষকতা তার পেশা হলেও তিনি সর্বসাধারণের কাছে একজন ভাষাবিজ্ঞানী ও পাঠ্যবইয়ের লেখক হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেন।
আলোচকরা বলেন, বাংলা ভাষা, সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি জগতের একজন বিদগ্ধ পণ্ডিত ছিলেন মাহবুবুল হক। ব্যক্তিমানুষ ও শিক্ষক হিসেবেও তিনি ছিলেন দায়িত্বশীল, পরিশ্রমী ও আন্তরিক। ইতিবাচক চিন্তাচেতনার অধিকারী মাহবুবুল হক ভাষা ও ব্যাকরণের অনেক জটিল বিষয়কে সরল ও পরিচ্ছন্নভাবে উপস্থাপন করতে পারতেন। ভাষা, লোকসাহিত্য, অভিধান ও অনুবাদ নিয়ে তার নিরলস সাধনা নিঃসন্দেহে আমাদের জ্ঞান-জগৎকে সমৃদ্ধ করেছে। তার কর্মনিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও অগাধ পাণ্ডিত্য ভবিষ্যৎ গবেষকদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, মাহবুবুল হক বাংলা ভাষার উৎকর্ষ সাধনে আজীবন নিবেদিত ছিলেন। প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণেই তিনি একজন মানবিক, সুশৃঙ্খল এবং সামাজিক দায়বোধসম্পন্ন মানুষ হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তার আলোকিত জীবন ও সৃজন আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগাবে।
আজকের বইমেলায় লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- টোকন ঠাকুর এবং জাকির আবু জাফর।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন- কবি সাখাওয়াত টিপু এবং কবি জব্বার আল নাঈম। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী শহীদুল ইসলাম এবং আশরাফুল হাসন বাবু। আজ ছিল শাহাবুদ্দিন আহমেদ দোলনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন সুরসুধা সংগীতায়ন এবং সাইফুল ইসলামের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন উজানের পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আজগর আলীম, সৈয়দ আশিকুর রহমান, খায়রুল ওয়াসি, মো. মানিক, অগ্নিতা শিকদার মুগ্ধ এবং আঁখি আলম।
আগামীকালের বইমেলার অনুষ্ঠানসূচি
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা শুরু হবে বেলা ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। আগামীকাল মেলায় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত থাকবে শিশুপ্রহর।
একইসঙ্গে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাও অুনষ্ঠিত হবে। অমর একুশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে আটটায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সাত্তার।
এছাড়া শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : গোলাম মুরশিদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সামজীর আহমেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন স্বরোচিষ সরকার এবং গাজী মো. মাহবুব মুর্শিদ। সভাপতিত্ব করবেন মোরশেদ শফিউল হাসান।
আরএইচটি/এসএম