প্রেস ক্লাব ও ডিআরইউতে সাংবাদিক লায়েকুজ্জামানের জানাজা অনুষ্ঠিত
জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সিনিয়র সাংবাদিক লায়েকুজ্জামানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি এবং জাতীয় প্রেসক্লাব ও ডিআরইউর স্থায়ী সদস্য ছিলেন।
রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় ডিআরইউর সামনে এবং সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা শেষে সহকর্মী ও সতীর্থদের ভালোবাসায় সিক্ত হন সাংবাদিক লায়েকুজ্জামান। জাতীয় প্রেস ক্লাব, বিএফইউজে, ডিইউজে, ডিআরইউ, বঙ্গবন্ধু সাংবাদিক পরিষদ, জাস্টিস ফর জার্নালিস্ট, ঢাকাস্থ পটুয়াখালী সাংবাদিক ফোরাম, দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ, ফরিদপুর জার্নালিস্ট ফাউন্ডেশন, দৈনিক কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে তার মরদেহে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এ সময় জাতীয় প্রেস ক্লাব, ডিআরইউ, বিএফইউজে, ডিইউজেসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ লায়েকুজ্জামানের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
লায়েকুজ্জামানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সভাপতি ও সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেন, লায়েকুজ্জামান আর প্রেস ক্লাবে ফেরত আসবেন না। তিনি চিরদিনের জন্য আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। একজন সাংবাদিক যখন চলে যান, তখন তার পরিবারের দায়িত্ব আর কেউ নেন না। তাদের পরিবারগুলোকে ভালো রাখার জন্য একটি ফান্ড তৈরি করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আর লায়েকুজ্জামানের পরিবার যাতে ভালো থাকে সেই দায়িত্ব আমি ব্যক্তিগতভাবে নেব। তার কোনো দেনা-পাওনা থাকলে এর দায়িত্ব আমি নেব। আপনারা তাকে মাফ করে দেবেন। আল্লাহ যেন লায়েকুজ্জামানকে জান্নাতবাসী করেন সেই দোয়া করি।
দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, লায়েকুজ্জামান আমার সঙ্গে অনেকদিন কাজ করেছেন। মানবজমিনে তিনি অনেকদিন ছিলেন। তিনি অনেক সাহসী সাংবাদিক ছিলেন। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে তিনি খবর লিখতেন। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। একজন লায়েকুজ্জামানের মৃত্যু নেই।
লায়েকুজ্জামানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, লায়েকুজ্জামান আমাদের সঙ্গে সাংবাদিক ইউনিয়ন করেছেন। তিনি ইউনিয়নের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। গতকাল দুপুরেও ইউনিয়নে বসে তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। লায়েকুজ্জামানের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, লায়েকুজ্জামান প্রতিদিন প্রেস ক্লাবে আসতেন। আমরা এমন একজন সদস্যকে হারিয়েছি, আমাদের ক্লাবের প্রতিটি সদস্য তার অভাব অনুভব করবে। লায়েকুজ্জামান আপাদমস্তক সাংবাদিক ছিলেন। তিনি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিলেন। আমি জাতীয় প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। পাশাপাশি তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। লায়েকুজ্জামান আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন।
লায়েকুজ্জামানের ভাতিজা মিলন বলেন, আমার কাকা আপনাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি কোনো ভুল-ত্রুটি করলে মাফ করে দেবেন। দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।
এর আগে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কর্মস্থলে বুকে ব্যথা অনুভব করলে সহকর্মীরা লায়েকুজ্জামানকে জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান। পরে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
সিনিয়র সাংবাদিক লায়েকুজ্জামান দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ পত্রিকার আগে দৈনিক কালের কণ্ঠে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে সম্প্রতি তিনি রূপালী বাংলাদেশ পত্রিকায় বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন।
লায়েকুজ্জামান ১৯৬৪ সালে ফরিদপুরের জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক বাড়ি ফরিদপুরের নগরকান্দায়। তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্ত হন। ১৯৮০ সালে তিনি ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স করেন।
আজ বাদ আছর ফরিদপুরের নগরকান্দায় গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে লায়েকুজ্জামানকে দাফন করা হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ওএফএ/পিএইচ